এলপিজি: বাস্তবায়ন হয় না, তবুও দাম নির্ধারণ
১০ মে ২০২১ ১৫:১২
ঢাকা: তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজির দাম কমিয়েছে সরকার। কিন্তু এবারও মানছেন না ব্যবসায়ীরা। বিক্রি করছেন নিজেদের নির্ধারণ করা দামেই। তারা বলছেন, এলপিজির যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা যৌক্তিক নয়। অন্যদিকে সরকারের বক্তব্য, সকলের মতামত নিয়েই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে হবে এলপিজি।
সৌদি সিপির সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করার অংশ হিসেবে গত ২৯ এপ্রিল, মে মাসের জন্য নতুন মূল্য ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসি। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির দাম প্রতি কেজি ৭৫ টাকা ৪৯ পয়সা ধরে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম মুসকসহ ৯০৬ টাকা। যা এপ্রিল মাসে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৭৫ টাকা। তবে সৌদি সিপির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় ঠিক রাখা হয় সরকারি পর্যায়ে বিক্রি করা এলপিজির দাম। সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম আগের মতোই ৫৯১ টাকা বহাল থাকলো।
রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীরা সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলপিজির পাইকারি দামের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত মূল্যের মিল না থাকায় সিলিন্ডার বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজধানীর হাটখোলার ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা পাইকারি মূল্যের চেয়েও কম। পাইকারি পর্যায়ে দাম বেশি দিতে হচ্ছে তাই খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর জানান, ৯৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত কোম্পানি ভেদে সিলিন্ডার বিক্রি করছেন।
ঢাকার বাইরে বরিশালের রূপাতলি এলাকার রনি এন্টারপ্রাইজের মালিক সোহেল রানা জানান, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বেসরকারি ব্যবসায়ীরা যে দাম নির্ধারণ করে দেন সে দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে কোম্পানিভেদে ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা দামে। খুলনার ময়লাপোতা এলাকার গনি এন্টারপ্রাইজের মালিক খালেক হোসেন জানান, ৯৫০ টাকার নিচে কোনো কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার তিনি বিক্রি করতে পারছেন না। একই চিত্র রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে।
চট্টগ্রামেও কোম্পানিভেদে ৯৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এলপিজি। হালি শহরের কয়েকটি দোকান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২ কেজির টোটাল গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা। বসুন্ধরা ও ওমেরা ১০৫০ টাকা। সরকারি পদ্মা, মেঘনা, যমুনাও বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। ময়মনসিংহের গাঙ্গিনার মোড়ে কয়েকটি দোকানে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। অথচ প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম হওয়া উচিত ছিল ৯০৬ টাকা।
এ প্রসঙ্গে এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমেরা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, বিইআরসি এলপিজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে পারেনি। উৎপাদন পর্যায়ে সিলিন্ডার প্রতি খরচ কম ধরা হয়েছে। আমরা পরিবেশকের কাছে সিলিন্ডার পৌঁছে দেই। সে খরচ ধরা হয়নি। সর্বোপরি উৎপাদনকারী কোম্পানির কোনো মুনাফা রাখা হয়নি। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে গেলে আমাদের লোকসান গুণতে হবে। তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত দাম পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। বিইআরসির পক্ষ থেকে আলোচনায় বসবে বলে জানানো হয়েছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত কোনো কোম্পানি সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারবেনা।
এদিকে বাজারে দেখা গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কোম্পানির গ্যাসের দামও বাড়তি। ঢাকায় এদের দেখা মিললেও বাইরে সরকারি কোম্পানির সিলিন্ডার ভোক্তাদের কাছে সোনার হরিণ। যেসব জায়গায় পাওয়া গেছে সেসব স্থানেও সিলিন্ডার প্রতি ৫০ থেকে দুইশ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন- বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, সরকারি সিলিন্ডারে মূল্য কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। সে কারণে হয়তো বাজারে কম দেখা যায়। তবে দাম বাড়তি নেওয়া হচ্ছে কিনা তা মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে মাঠ পর্যায়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, চলমান করোনার কারণে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মাঠ পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত এলপিজির মূল্য বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবের দামের ভিত্তিতেই এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়েছে। প্রোপেন ও বিউটেনের প্রতি টন সৌদি সিপি গড়ে ৫৪০ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার ধরে হিসাব করা হয়েছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত মুসক ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে আনুপাতিক হারে পরিবর্তন করা হয়েছে। এলপিজির দাম সমন্বয় সংক্রান্ত গঠিত কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী বিইআরসি
গত ২৮ এপ্রিল শুনানি করে ২৯ এপ্রিল দাম নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত ১২ এপ্রিল প্রথম বারের মতো দাম নির্ধারণ করা হয়।
সারাবাংলা/জেআর/এএম