কোয়াড নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্ষতি হবে— ‘হুঁশিয়ারি’ চীনের
১০ মে ২০২১ ২০:২৩
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত— এই চার দেশের কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’-এ বাংলাদেশকে টানার চেষ্টা চলছে। তবে এই জোটকে ‘চীনবিরোধী’ একটি জোট বলে মনে করছে চীন। সেক্ষেত্রে দেশটি চায় না, বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দিক। শুধু তাই নয়, ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কোনোভাবে কোয়াডে অংশগ্রহণ করলে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যথেষ্ট ক্ষতি হবে।
তবে ঢাকা বরাবরই বলে আসছে, কোনো ধরনের সামরিক জোটে অংশ নেওয়ার পক্ষে বাংলাদেশ নেই। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ আছে— এমন যেকোনো অর্থনৈতিক জোটের সঙ্গেই বাংলাদেশ থাকতে আগ্রহী। বিশ্লেষকরাও বলছেন, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক জোট ইস্যুতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই হাঁটছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত— এই চার দেশের উদ্যোগে ২০০৭ সালে কৌশলগত একটি সংলাপের সূচনা হয়, যার নাম দেওয়া হয় কোয়াড। তবে এরপর প্রায় একদশক আর এর তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। ২০১৭ সাল থেকে ফের এই জোট নিয়ে কথাবার্তা হতে থাকে। গত বছরের অক্টোবরে টোকিও’তে অনুষ্ঠিত দুই দিনের এক বৈঠক থেকে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে কৌশলগত এই জোট। নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সংলাপ, তথ্য আদান-প্রদান এবং সামরিক মহড়া করে থাকে জোটের চারটি দেশ। আর এই জোটকেই চীনবিরোধী বলে মনে করছে চীন। আর এই জোটের পক্ষ থেকে ঢাকাকে যুক্ত করার আগ্রহ থাকলেও সেটিকে চীন ভালো চোখে দেখছে না।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সোমবার (১০ মে) ঢাকার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে এ বিষয়টি উঠে আসে।
বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি গত ২৭ এপ্রিল ঝটিকা সফরে ঢাকা এসেছিলেন। বাংলাদেশ যেন কোয়াডে যুক্ত না হয় এবং তাদের সঙ্গেই থাকে, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি ঢাকা সফরে এমন অনুরোধ করেছিলেন। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী জানানো হয়েছে?
এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, ‘কোয়াড হচ্ছে বৈশ্বিক একটি ছোট জোট (গ্রুপ), যারা চীনের বিপক্ষে। এই অঞ্চলের দেশ জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও দুইটি দেশকে সঙ্গে নিয়ে কোয়াডের নামে কী করছে তা পরিষ্কার।’ কোয়াড চীনবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত— এটি স্পষ্টভাবেই বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আরও বলেন, ‘এই ছোট জোটের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। বাংলাদেশ কোনোভাবে এই জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যথেষ্ট ক্ষতি হবে।’
এর আগে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পাশাপাশি চীনা রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যকে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের হুঁশিয়ারি বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কোয়াড প্রশ্নে চীনের অবস্থান স্পষ্ট— এই জোটে তারা বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান ও মৌলিক অবস্থান (স্ট্যান্ডিং পজিশন ও প্রিন্সিপাল পজিশন) হলো— আমরা কোনো ধরনের সামরিক (ডিফেন্স) জোটে নেই। অন্যদিকে আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সব দল বা জোটের সঙ্গেই আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব ধরনের হস্তক্ষেপমুক্ত বঙ্গোপসাগর (ফ্রি বে অব বেঙ্গল) চাই। এ ক্ষেত্রে আমরা কোনো ধরনের বাধা (এনকামব্রান্স) চাই না। বঙ্গোপসাগরে আমরা অবাধ যোগাযোগ (ফ্রি মোবিলিটি) চাই এবং বঙ্গপসাগরে আমরা বৈশ্বিক কোনো জোটের শক্তি প্রদর্শন চাই না (নো এনকামব্র্যান্স অ্যাবাউট অ্যানি গ্রুপ অব পাওয়ারস)।’
কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি চীনের এমন বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোয়াড তৈরির পর থেকেই একে নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। সরাসরি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে কোয়াডে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে। চীনের জন্য এটি দুঃশ্চিন্তার বিষয় হতেই পারে। সে কারণেই তারা বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলছে। এখন পর্যন্ত আমার যা মনে হচ্ছে, এই ইস্যুতে সরকার এখনো সঠিক পথেই আছে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর
কোয়াড কৌশলগত জোট চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সামরিক জোট