‘হোটেল নির্মাণ নয়, ইতিহাস জানার ব্যবস্থা করতেই গাছ কাটা হয়েছে’
১১ মে ২০২১ ১৪:০৬
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, হোটেল নির্মাণ নয়, ইতিহাস জানার ব্যবস্থা করতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কিছু গাছ কাটা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্যানে মানুষ যেন নিরিবিলি শান্তিতে কিছুটা সময় কাটাতে পারে সে ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাবারের দোকান-ভাতের হোটেল ইত্যাদি বানানোর জন্য গাছ কাটা হচ্ছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক।
মঙ্গলবার (১১ মে) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থান সংরক্ষণে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তারই অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সে জন্য এখানকার ছোট-বড় কিছু গাছ কাটা হয়েছে। তবে পরিবেশের ক্ষতি না করে কিভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাজ চলমান রাখা যায় তার উপায় বের করার চেষ্টা করব। গাছ কাটা নিয়ে পরিবেশবিদ ও নগরবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি। উদ্যানের যে গাছগুলো না কাটলেই নয়, কেবল সেগুলোই কাটা হয়েছে এবং এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্তত ১০ গুণ বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। এরপরও সকলের উদ্বেগকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও নগর পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করব। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সকল ঐতিহাসিক স্থান যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হবে।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা হলেও প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১০০০ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে দেশের প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদ ও উদ্যানতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার যেকোনো ধরনের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে পরিবেশবিদসহ সর্বসাধারণের উদ্বেগকে আমরা শ্রদ্ধা করি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশকেও সমান গুরুত্ব দেয়। সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভুগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে দৃষ্টিনন্দন ও আন্তর্জাতিকমানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ীর কার পার্কিং, ৭টি ফুড কিয়স্ক ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বড় এলাকায় এত মানুষের সমাগম হয়, কিন্তু তাতে কোনো টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ এবং রিফ্রেশমেন্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরিবারসহ দর্শনার্থীরা উদ্যানে যেন ভ্রমণ করতে পারে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পরিবেশে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাতে পারে তার সকল ব্যবস্থা এখানে করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ