Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংযত হয়ে কথা বলুন, খালেদার নখের সমানও হতে পারেননি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ মে ২০২১ ১৪:২২

ঢাকা: এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে ‘সংযত’ হয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১১ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়াপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের অত্যন্ত দায়িত্বশীল মন্ত্রী, শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন সম্পর্কে গতকাল কিছু রুচিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার নাম উল্লেখ করতে চাই না। কারণ, এটা আমার শিক্ষা-দীক্ষার সঙ্গে যায় না।’

‘আরেকজন মন্ত্রী, যিনি ডক্টরেট-টক্টরেট করে এসেছেন, কিভাবে কী করেছেন, সেটা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। তিনিও আমাদের নেত্রী সম্পর্কে খুবই অশালীন ভাষায় কথা বলেছেন। আমি তাদের সেই কথার কোনো জবাব দিতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, খালেদা জিয়া সম্পর্কে সংযত হয়ে কথা বলুন। তার পায়ের নখের সমানও হতে পারেননি,’ — বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই বলে যে মতামত দেওয়া হয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি Per Incuriam বা ভ্রান্ত মতামত। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪০১ ধারায় সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে শর্তহীন কিংবা শর্তযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার । আদালত যদি বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞাও দেয়, তারপরও সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি ‘৪০১ (১) এবং ৪০১(৪ ক) ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৪০১ (৪ক) ধারা পড়লে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, কোনো আইনে যদি কোনো আদালত সাজাপ্রাপ্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত নয় এমন কোনো ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আদেশ দেন সেক্ষেত্রেও সরকার তা স্থগিত করে তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে। এটি সরকারের সহজাত ক্ষমতা কিংবা Inherent Power। দুদক আইন, ২০০৪ এ সরকারের এই ব্যাপক সহজাত ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়নি। ফলে, দুদকেরও এখানে বলার কিছু নাই।’

খালেদা জিয়া সম্পর্কে ‘যাচ্ছে তাই কথা’ বলে সরকার পার পেয়ে যাবে চিন্তা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যেসব কথা বলা হচ্ছে এগুলো শুধু অশালীন নয়, অমার্জিত এবং অগ্রহণযোগ্য। আমি আবারও বলছি, দয়া করে সংযত হোন, দয়া করে আপনাদের কথা একটু কমান। যাচ্ছে তাই বলবেন, আর মনে করবেন সবসময় পার পেয়ে যাবেন। এভরিথিং ইজ বিং নোটেড অ্যান্ড দি পিপলস অব দিস কান্ট্রি উড বি গিভ এনারসার টু টাইমলি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) অন্তরীণ করে রাখা, তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া এটাই সরকারের লক্ষ্য। তার দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া মূল উদ্দেশ্য। এদেশে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে একটি দল আছে সেটা হচ্ছে বিএনপি, জনগণের রাজনীতি যেটা সেটা ধারণ করে বিএনপি। অর্থাৎ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের অন্তরআত্মার রাজনীতি করে বিএনপি। এই দলের মূল শক্তি জনগণ। বিএনপির ভোটাররা বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেখতে চায়, শতকরা একশ জন মানুষের যে মূল্যবোধ, ধর্মীয়বোধ, চিন্তাবোধ যারা ধারণ করে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিএনপি কাজ করে।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নাকচ করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনারা বলেছেন, অনুমতি দিতে পারছেন না। কেন পারছেন না, যে যুক্তিগুলো দিলেন, সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি। তারা বলেছেন যে, সাজাপ্রাপ্তদের বিদেশে পাঠানোর নজির নেই। এটা তারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।’

‘১৯৭৯ সালে আ স ম আবদুর রব জেলে ছিলেন। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে এই আইনে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য জার্মানে পাঠিয়েছিলেন। এরপরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে ২০০৮ সালে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপর অত্যন্ত উচ্চপদস্ত প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার দুই সহোদর ভাইকে এই ৪০১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড মাফ করে দিয়ে বাইরে পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং কেন এই সমস্ত খোঁড়া যুক্তি? সোজা বলেন যে, আমরা দেব না’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘সেই বলার মতো বদান্যতা আপনাদের নাই, সেই বড় যে হৃদয় সেটা আপনাদের নাই। শেখ মুজিবুর রহমানের এটা ছিলো। উনিও তার অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে এসমস্ত সুবিধা দিয়েছেন, ছেড়ে দিয়েছেন, মুক্তি দিয়েছেন এবং তাদেরকে হেল্পও করেছেন। কিন্তু আপনাদের সেই বদান্যতা নেই। থাকলে বেগম খালেদা জিয়াকে অনেকদিন আগে আপনারা ছেড়ে দিতেন, আপনারা রাজনীতি করতে দিতেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) এই আচরণ ম্যাডামকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে না দেওয়ার বিষয়টা, এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, অমানবিক এবং জনগণকে ভ্রান্ত ধারণা দেওয়া হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা তখনও জানিয়েছি, এখনও জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করি নাই। আবেদন করেছে পরিবার। ইটস ভেরি লাইটলি অ্যান্ড জেনুইন। তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, যারা আবেদন করেছেন। সেখানে সবাই এসপেক্ট করেছিল, এমনকি বিদেশিরা পর্যন্ত এসপেক্ট করেছিল তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। সেটা তারা দেয় নাই।’

সরকার পুঁজিবাদীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা শুধুমাত্র কিছু পুঁজিবাদীদের স্বার্থে, কিছু লুটপাটকারীদের স্বার্থে পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করছেন। বাঁশখালীতে শ্রমিকদেরকে হত্যা করা হয়েছে কিছু পুঁজিবাদীর স্বার্থে। শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন চেয়েছিল, তারা ছুটি বাড়িয়ে দিতে বলেছিল। গতকাল টঙ্গিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, কেন? আলোচনা করেন, কথা বলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে বন্দুক বের করে গুলি করলেন কেন?’

‘প্রণোদনা কোথায় দিচ্ছেন?’- প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এমন প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘বার বার করে বলেছেন যে, প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কোথায় প্রণোদনা দিচ্ছেন? এই যে লাখ ৬ কোটি মানুষ ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করছে, তাদের ৮০% বেকার। তাদের কোনো আয় নাই। আমরা বলেছিলাম যে, এদের কাছে নগদ টাকাটা পৌঁছান। এটা খুব কঠিন কাজ না। প্রত্যেকের এনআইডি কার্ড আছে, সেখানে ব্যবস্থা করে টাকাটা পৌঁছানো যায়। আপনি ১০/১২ কোটি টাকা দিয়ে বলছেন, দিয়েছি। কেন আপনি ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছেন না তাদের জন্য? এরাই তো মানুষ, জনসংখ্যার এক দশমাংশ।’

সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ

খালেদা জিয়া টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর