বেইজিংকে ঢাকার জবাব— বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী
১১ মে ২০২১ ১৬:১০
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত— এই চার দেশের কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’কে জড়িয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করে।
মঙ্গলবার (১১ মে) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরা নির্ধারণ করব। যেকোনো দেশ তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে, আমরা আমরা তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনব। তবে আমরা কী করব বা কী করব না, জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রিন্সিপাল পজিশন থেকে সে বিষয়টি আমরা নির্ধারণ করব এবং সিদ্ধান্ত নেব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রদূত) অনেক কথাই বলতে পারেন। তিনি একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা হয়তো এটা (কোয়াডে বাংলাদেশের অন্তর্ভুতি) চায় না। তাই তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। যে প্রতিষ্ঠানের (কোয়াড) কথা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সে প্রতিষ্ঠানের লোকজন আমাদেরকে এখনো কিছুই বলেনি। তিনি (রাষ্ট্রদূত) একটু আগ বাড়িয়ে কথাটা বলে ফেলেছেন। এ নিয়ে আমাদের বিশেষ কোনো বক্তব্য নেই।’
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’ নিয়ে আগে থেকেই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে আসছে চীন। তারা এই জোটকে ‘চীনবিরোধী জোট’ হিসেবে দেখছে। এই জোটে বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্ত না হয়, সে বিষয়েও চীন বক্তব্য দিয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সোমবার (১০ মে) ঢাকার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোয়াড চীনবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। এই ছোট জোটের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। বাংলাদেশ কোনোভাবে এই জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যথেষ্ট ক্ষতি হবে।’
চীনের এমন অবস্থান প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কৌশল সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বহু সময় বহু লোক বহু কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের স্বার্থের জন্য, দেশের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে যা যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করেছি। আমরা জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করি এবং আমরা এই নীতি অবলম্বন করে যাব।’
ভূ-রাজনীতি পরিবর্তিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একাধিক বৈশ্বিক জোটের কর্মকাণ্ড এখন দৃশ্যমান এবং এই জোটগুলোর কার্যক্রমও এশিয়া কেন্দ্রিক। অন্যদিকে, ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। চলমান পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতি ইস্যুতে এর আগেও কোনো ধরনের সামরিক জোটে বাংলাদেশের না থাকার বিষয়টি জোর দিয়েই সারাবাংলাকে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বর্তমান ও মৌলিক অবস্থান (স্ট্যান্ডিং পজিশন ও প্রিন্সিপাল পজিশন) হলো— আমরা কোনো ধরনের সামরিক (ডিফেন্স) জোটে নেই। অন্যদিকে আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সব দল বা জোটের সঙ্গেই আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব ধরনের হস্তক্ষেপমুক্ত বঙ্গোপসাগর (ফ্রি বে অব বেঙ্গল) চাই। এ ক্ষেত্রে আমরা কোনো ধরনের বাধা (এনকামব্রান্স) চাই না। বঙ্গোপসাগরে আমরা অবাধ যোগাযোগ (ফ্রি মোবিলিটি) চাই এবং বঙ্গপসাগরে আমরা বৈশ্বিক কোনো জোটের শক্তি প্রদর্শন চাই না (নো এনকামব্র্যান্স অ্যাবাউট অ্যানি গ্রুপ অব পাওয়ারস)। এটাই আমাদের প্রিন্সিপাল পজিশন।’
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর
কোয়াড জোট নিরপেক্ষ নীতি ড. এ কে আবদুল মোমেন ঢাকা-বেইজিং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ-চীন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সামরিক জোট