করোনায় মৃত্যু ছাড়াল ১২ হাজার, ১৬ দিনে শেষ একহাজার
১১ মে ২০২১ ১৮:০৭
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ভয়ংকর ছিল এপ্রিল মাস। সেই মাস পেরিয়ে চলতি মে মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণ শনাক্ত ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর পরিমাণ দৃশ্যত কমেছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য বলছে, সবশেষ ১৬ দিনেও দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন এক হাজার মানুষ। এর চেয়ে কম সময়ে হাজার মৃত্যু হয়েছে কেবল সেই দুই হাজার মৃত্যুর বেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ২৫ এপ্রিল যেখানে দেশে করোনায় মৃত্যু পেরিয়ে গিয়েছিল ১১ হাজার। সেখানে ১৬ দিন পর ১১ মে এসে সেই সংখ্যা পেরিয়ে গেল ১২ হাজার। সে হিসাবে দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৪৩০ দিনের মাথায় এসে মৃত্যু ছাড়াল ১২ হাজারের ঘর।
মঙ্গলবার (১১ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেলেন মোট ১২ হাজার ৫ জন।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু যেভাবে ১২ হাজার ছাড়াল
দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। সেদিন একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে। প্রায় একমাস পর ১৫ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা স্পর্শ করে ৫০-এর ঘর। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন।
একমাস পাঁচ দিন পর ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ। ১৫ দিনের মাথায় ১০ জুন এই সংখ্যা স্পর্শ করে হাজারের ঘর। সে হিসাবে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫ দিনে করোনায় মৃত্যু স্পর্শ করে হাজারের ঘর।
এর ২৫ দিনের মধ্যেই আরও একহাজার মৃত্যুর কারণ হয় করোনা। ৫ জুলাই দুই হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু। এর পরের এক হাজার মৃত্যু হয় আরও দ্রুত— মাত্র ২৩ দিনে। ২৮ জুলাই তিন হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে সময় লাগে ২৮ দিন করে। ২৫ আগস্ট চার হাজার ও ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু। এরপর করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর গতি সামান্য কমে যায়।
২২ সেপ্টেম্বরের ৪৩ দিন পর ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, এর ৩৮ দিন পর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং এর ৪২ দিন পর ২৩ জানুয়ারি করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু পেরিয়ে যায় আট হাজারের ঘর।
এরপর করোনায় মৃত্যুর গতি বেশ ধীর হয়ে পড়ে। আট হাজারের পর ৯ হাজারের ঘরে যেতে সময় লাগে দুই মাসেরও বেশি— ৬৭ দিন। এ বছরের ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যায় ৯ হাজার।
এপ্রিলে এসে করোনায় মৃত্যু সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে। এই মাসেই একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুও দেখেছে বাংলাদেশ। তাতে এপ্রিলের প্রথম ২৫ দিনেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয়ে দুই হাজার ৭ জনের। ২৫ এপ্রিল করোনায় মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় ১১ হাজার। এই ২৫ দিনে গড়ে প্রতিদিন মারা গেছেন ৮০ জন করে।
এর পরের ১৬ দিনে এসে মৃত্যু ছাড়াল ১২ হাজারের ঘর। শেষ এই ১৬ দিনে সুনির্দিষ্টভাবে ৯৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর মধ্যে কেবল আজ (মঙ্গলবার) ও গতকাল (সোমবার) মৃত্যু ছিল ৪০-এর নিচে। সব মিলিয়ে এই সময়েও গড়ে একেকদিন মারা গেছেন প্রায় ৬০ জন। যেখানে গেল মার্চে আগে গত একবছর সময়ের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডই ছিল ৬৪ জন (২০২০ সালের ৩০ জুন)।
করোনায় মৃত্যুর প্রায় তিন–চতুর্থাংশই পুরুষ
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুবরণকারী ৩৩ জনের ২১ জন পুরুষ, ১২ জন নারী। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৬৯৯ জন পুরুষ ও ৩ হাজার ৩০৬ জন নারী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। শতাংশ হিসাবে করোনায় মোট মৃত ব্যক্তির ৭২ দশমিক ৪৬ শতাংশ পুরুষ, ২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ নারী।
বয়সভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৩ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, তার মধ্যে ১৬ জনের বয়স ষাটের বেশি, ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পাঁচ জন ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী দুই জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টার মতোই এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারী ১২ হাজার ৫ জনেরও অর্ধেকেরই বেশি ষাটোর্ধ্ব। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে নবজাতকসহ অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সীদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত ১২ হাজার ৫ জনের মধ্যে ছয় হাজার ৮৫৬ জনই ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ করোনায় মোট মৃত্যুর ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশই এই বয়সী।
এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২ হাজার ৮৯৪ জন (২৪ দশমিক ১১ শতাংশ) ও ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী এক হাজার ৩২৯ জন (১১ দশমিক ০৭ শতাংশ) মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।
মৃত্যুর হার কম বয়সীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম। এর মধ্যে নবজাতক থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে মারা গেছে ৪৬ জন (শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ), ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মারা গেছে ৭৯ জন (শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ)। এছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২১৫ জন (১ দশমিক ৭৯ শতাংশ) ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫৮৬ জন (৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ) মারা গেছেন।
বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে ১৯ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে, সাত জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এছাড়া সিলেটে মারা গেছেন তিন জন, রংপুরে দুই জন। একজন করে মারা গেছেন রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুতেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগই এগিয়ে রয়েছে।
অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ৬ হাজার ৯৫৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুই হাজার ২২৭ জন জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭২৫ জন মারা গেছেন খুলনা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬৩০ জন (৫ দশমিক ২৫ শতাংশ), রংপুর বিভাগে ৪৩৭ জন (৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ), সিলেট বিভাগে ৪১৮ জন (৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ), বরিশাল বিভাগে ৩৬৫ জন (৩ দশমিক ০৪ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ২৪৭ জন (২ দশমিক ০৬ শতাংশ)।
সারাবাংলা/টিআর
করোনা নিয়ে মৃত্যু করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস স্বাস্থ্য অধিদফতর