Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আদালতে জবানবন্দি জাকারিয়ার, সহিংসতায় ‘সম্পৃক্ততার’ দায় স্বীকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ মে ২০২১ ১৭:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের মামলায় গ্রেফতার হওয়া বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী আদালতে দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, জবানবন্দিতে জাকারিয়া নোমান ফয়জী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় মদদ ও জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার (১১ মে) চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খন্দকারের আদালতে জাকারিয়া নোমান ফয়জী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) আবদুল্লাহ আল মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে আমরা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। রিমান্ড শেষে তাকে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে জবানবন্দি দিয়ে তিনি হাটহাজারীতে তাণ্ডবের ঘটনায় উনার যতটুকু দায় আছে সবটুকু স্বীকার করে নিয়েছেন। আগামীকাল (বুধবার) আরও একটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।’

গত ৪ মে বিকেলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের একটি দল জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে গ্রেফতার করে। হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বাবা প্রয়াত নোমান ফয়জী সংগঠনটির নায়েবে আমীর ছিলেন।

গ্রেফতারের পর তাকে গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের সহিংস তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই মামলায় তাকে পাঁচদিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি পেয়েছিল পুলিশ।

গ্রেফতারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকারিয়া নোমান ফয়জী হাটহাজারীতে যেসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে, বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ, থানা ভাংচুর, ডাকবাংলো ভাংচুর, ভূমি অফিসে আগুন দেওয়াসহ যেসব ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে- প্রত্যেকটিতেই তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। এসব ঘটনা ঘটানোর নেপথ্য মাস্টারমাইন্ডদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তাদের ইন্ধনে, তাদের নির্দেশে এবং তাদের অর্থের যোগানে ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে।

শুধু হাটহাজারী নয়, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হিসেবে জাকারিয়া নোমান ফয়জী সারাদেশে সংঘটিত প্রত্যেকটি তাণ্ডবের ঘটনায় কমবেশি সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও দাবি পুলিশ সুপারের।

এদিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে জাকারিয়া নোমান ফয়জীর বিরুদ্ধে গত ৬ মে হাটহাজারী থানায় ধর্ষণের মামলা করেন এক নারী।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকের মাধ্যমে ওই নারীর সাথে জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর পরিচয় হয়। ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে মেয়েটির সঙ্গে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে ও পরবর্তীতে বিয়ের প্রলোভন দেখান। জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে বিশ্বাস করে মেয়েটি নগরী থেকে হাটহাজারীতে তার কাছে চলে যান। তাকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে পৌর সদরে কনক বিল্ডিংয়ের নিচতলায় বাসা ভাড়া করে রাখা হয়। একবছর ধরে ওই বাসায় রেখে জাকারিয়া নোমান ফয়জী তার বিয়েবর্হিভূত শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন। চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন বাসা ও হোটেলে নিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন।

একই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক জানিয়েছিলেন, জাকারিয়া নোমান ফয়জীর একাধিক মহিলার সঙ্গে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, একাধিক মহিলার সঙ্গে তার বিবাহবর্হিভূত মনস্তাস্ত্বিক সম্পর্ক এবং বিবাহবর্হিভূত শারীরিক সম্পর্ক ছিল।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন গত ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ভাংচুর, স্থানীয় ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে হেফাজতে ইসলামের চার কর্মী নিহত হন। এর জেরে তিনদিন ধরে হাটহাজারী থানার অদূরে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেওয়াল তুলে অবরোধ তৈরি করে রাখে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই ঘটনার জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় প্রথমে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়, যাতে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। গত ২২ এপ্রিল আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু’টিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীকে। অপর মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সংঘাতের পর থেকে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক হারুন ইজাহার, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জীসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরোধিতার নামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল হেফাজতে ইসলাম, যাতে ইন্ধন দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত।

তবে হেফাজতের সাবেক আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না। এমনকি হেফাজতে ইসলাম ‘সরকার বিরোধী’ নয় বা বর্তমান সরকারকে হটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসানোর কোনো এজেন্ডা হেফাজতের ছিল না বলে বাবুনগরীর দাবি করেন। এ অবস্থায় হেফাজত নেতাদের একটি দল দুই দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠকও করেন। তবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে।

গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে জুনায়েদ বাবুনগরী ফেসবুকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। আবার এ ঘোষণার রেশ না কাটতেই রাত সাড়ে তিনটার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ফেসবুক পেইজ থেকে তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠনের কথাও প্রচার করা হয়। পরে আরও দুজনকে সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করার কথাও জানানো হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

জাকারিয়া নোমান ফয়জী টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর