বেরোবিতে ‘ভিসিপন্থিদের পদোন্নতি দিতে’ গোপন সিন্ডিকেট সভা
১১ মে ২০২১ ২২:২৭
রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে, যোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে ভিসিপন্থিদের পদোন্নতি দিতে গোপনে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন বলে দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মে) ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে ভার্চুয়াল সভার নামে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা সূত্রে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য ইতোপূর্বে সাক্ষাৎকার দেওয়া ৭০ জনেরও বেশি কর্মকর্তার পদোন্নতির ব্যাপারে এই সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এর মধ্যে, ৩৩ জন সহকারি রেজিস্ট্রার থেকে উপ-রেজিস্ট্রার, ২২ জন সেকশন অফিসার গ্রেড-১ থেকে সহকারি রেজিস্ট্রার, চার জন সহকারি পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) থেকে উপ-পরিচালক, দুই জন সেকশন অফিসার গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ পদমর্যাদায় পদোন্নতি পেতে চলেছেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করা শর্তে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় থাকা এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, তিনি যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেড় বছর আগেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা। উপচার্যপন্থি হওয়ার পরও, ভিসির অনুসারীরা তা হতে দেননি। আশা করছেন এবার তার পদোন্নতি হবে। তবে, গোপনে পদোন্নতি তার চাকরি জীবনের জন্য একটা কালো অধ্যায় হয়ে দাঁড়াবে; কিন্তু তার কিছু করার নেই — বলেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে, গোপনে সিন্ডিকেট সভা আহ্বানের ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো বিষয় নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, দ্বিতীয় দফা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় সব অপকর্ম এবং বিপুল সংখ্যক অবৈধ নিয়োগের বৈধতা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ভিসি। সে কারণেই, উপাচার্যের অপকর্মে সহায়তাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবৈধ পদোন্নতিকে বৈধ এবং ভিসিপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করার জন্য তড়িঘড়ি করে ছুটির মধ্যেই সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম ফরিদ-উল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব অবকাঠামো থাকার পরেও সিন্ডিকেট সভা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় লিয়াজোঁ অফিসে করা হয়। শিক্ষক সমিতি অনেকবার ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেট সভাকক্ষে সভা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে সভা বয়কট করেছে।
ভিসি তার অনেক অপকর্ম বিশেষ করে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড সিন্ডিকেটে পাস করিয়ে নিয়েছেন। এবারে তিনি ছুটির মধ্যে বিশেষ করে কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন বলে শুনেছি, বলেন অধ্যাপক ফরিদ।
বেরোবির রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, এর আগের সিন্ডিকেট সভায় ভিসি অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে পদোন্নতি না দিয়ে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তাবিউর রহমান প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রদীপ কুমার সরকার, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছদরুল ইসলাম সরকারকে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে এবং উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি দিয়েছেন।
তবে, মামলা চলাকালীন কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির সুযোগ নেই বলেও রেজিস্ট্রার দফতরের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে, এই গোপন সিন্ডিকেটে গণনিয়োগের আশঙ্কায় শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছে ভিসিবিরোধীরা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ।
এ ব্যাপারে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গণনিয়োগ দিয়ে কলঙ্কিত করার সঙ্গে সরকারকেও বিব্রত করা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি।
সে কারণে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। ভিসি অবৈধ কর্মকাণ্ড যেনো বৈধ করতে না পারেন সে জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা থেকে বিরত থাকার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হয় — জানান অধ্যাপক মতিউর।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ড. কলিমউল্লাহর ভিসি হিসেবে কার্যকাল চলতি বছরের ১৩ জুন শেষ হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও, ইউজিসির অন্য একটি কমিটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া,অবৈধ নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দেড় শতাধিকদেরও বেশি অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত সম্পন্ন করেছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউনের কারণে সেই প্রতিবেদন এখনও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জমা পড়েনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল এবং ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/একেএম