আইজিপি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেই বাবুলকে গ্রেফতার
১২ মে ২০২১ ১৫:১৫
ঢাকা: পাঁচ বছর আগে গুলি ও ছুরিকাঘাতে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর নিহত হওয়ার ঘটনায় নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। সেই মামলা তদন্তের শেষ পর্যায়ে এসে মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) অবহিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে এসপি বাবুলকে।
বুধবার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। এদিন চট্টগ্রামের আদালতে বাবুল আক্তারের পাঁচ বছর আগে দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। পরে পাঁচলাইশ থানায় বাবুলসহ আট জনকে আসামি করে নতুন একটি মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
পিবিআই প্রধান বলেন, তদন্তের স্বার্থে পিবিআই বাবুল আক্তারকে ডেকেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়।
বনজ কুমার বলেন, বাবুল আক্তার মিতু হত্যা মামলার বাদী। মামলার বাদীকে ইচ্ছা করলেই গ্রেফতার করা যায় না। বাদীকে গ্রেফতার করতে হলে ফাইনাল রিপোর্ট দিতে হয়। খুলশি থেকে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর নতুন মামলা হয়েছে। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়েছেন।
বাবুল আক্তারের দুই বন্ধু সাইফুল হক ও নড়াইলের গাজী আল মামুনকে এর মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। বনজ কুমার জানান, তারা দু’জনেই বাবুলের বন্ধু। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতেই পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত সম্পর্কে বনজ কুমার বলেন, মিতু হত্যা মামলায় প্রথমে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন, কতদিন ঝুলে থাকবে এই মামলা। কিছু নতুন প্রশ্ন আসে। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মিতু হত্যায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গাজী আল মামুন ও সাইফুল হক নামে বাবুলের দুই বন্ধু।
নতুন যে হত্যা মামলাটি হয়েছে, তাতে এক নম্বর আসামি সাবেক পুলিশ সুপার ও নিহত মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার। এই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে বাবুল আক্তারকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে রিমান্ডের আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পিবিআই।
বনজ কুমার বলেন, আমরা চাইলেও মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলতে পারি না। মিতু হত্যার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজ আমরা একজনকে দেখেছিলাম, তার নাম কামরুল ইসলাম মুসা। মুসা এখনো নিখোঁজ। আমরা জেনেছি মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যাতায়াত করতেন। তার অনুপস্থিতিতে মুসা বাজারও করে দিতেন। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে মুসা সোর্স ছিল কি না। মুসাকে শুধু বাবুল আক্তারই চিনতেন। ভিডিও ফুটেজে এই মুসাকে স্পষ্ট চেনা গেছে। কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসাকে নিয়ে কোনো সন্দেহের কথা জানাননি বাবুল। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে সন্দেহ করেনি বা সন্দেহজনক বলে পুলিশকে জানায়নি।
বনজ কুমার বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি কার্যক্রমে আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। আমরা সেটিই বিশ্বাস করেছি। আবার স্ত্রী মিতু হত্যার পর তার যে আচরণ ছিল, তা ছিল সবচেয়ে আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত পাঁচ বছরে এই মামলার তদন্তে পুলিশ অনেককেই গ্রেফতার ও আটক করেছে, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বাবুল আক্তারকেও একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে খবর প্রকাশ হয়। এর মধ্যে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ। পরে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বাবুল আক্তার। নানা নাটকীয়তা শেষে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর থেকেই মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পিবিআইয়ের তদন্তে তেমন তথ্য উঠে আসায় তাকেই আসামি করে মামলা করলেন মোশাররফ হোসেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর