করোনা মোকাবিলায় ঢাকা-বেইজিং সহযোগিতার প্রত্যয়
১২ মে ২০২১ ১৬:০২
ঢাকা: চলমান নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ-চীন পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে চায়। বাংলাদেশের ভালো ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। কাঁচামাল এনে বাংলাদেশেই যৌথভাবে চীনের ভ্যাকসিনের উৎপাদন করা সম্ভব।
চীনের উৎপাদিত সিনোফার্মা ভ্যাকসিনের ৫ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে বুধবার (১২ মে) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তারা এমন মন্তব্য করেন।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত— এই চার দেশের কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’কে জড়িয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ কোয়াডে যুক্ত হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্ষতি হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য সম্পর্কে বুধবার ভ্যাকসিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আগে তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব। চীনের রাষ্ট্রদূত এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন, কোনো ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি এমন মন্তব্য করেননি।
আরও পড়ুন- ৫ লাখ ভ্যাকসিন উপহার দিলো চীন
চীনের রাষ্ট্রদূত গত ১১ মে সাংবাদিকদের আরও বলেছিলেন, শুরুতে বাংলাদেশ চীনের ভ্যাকসিনের আগ্রহ দেখাতে সময় নেওয়ায় এখন ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বুধবার ভ্যাকসিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, শুরুতে চীনের ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল। কেননা ওই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়নি। আমরা আমাদের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই সচেতন। তাই তখন পদ্ধতিগত পথে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন না দিলে আমরা কোনো ভ্যাকসিন নেব না, অথবা কোনো ভ্যাকসিন নিতে হলে তা অন্য দেশগুলো ব্যবহারের পর তার প্রতিক্রিয়া দেখে সিদ্ধান্ত নেব। ওই সময়ে আমাদের এই নিয়মগুলো মেনে চীনের ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ ছিল না। পরে চীনের ভ্যাকসিন যখন একাধিক দেশে প্রয়োগ হয়েছে এবং তার নেতিবাচক কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, তখন আমরা তা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণেই চীনের ভ্যাকসিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ করার কারণ নেই। কেননা আমরা সার্বভৌম রাষ্ট্র, আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য গুণগত মানের বিষয়টি ঠিক রেখেই সিদ্ধান্ত নেব। আমরা জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে এই ভ্যাকসিনটি এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে।
আবদুল মোমেন আরও বলেন, আমরা এখন মাত্র ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের প্রচুর ভ্যাকসিন প্রয়োজন। আশা করব চীনের উদ্যোগে উৎপাদিত আরও ভ্যাকসিন আমরা পাব। চীন আমাদের কথা দিয়েছে যে তারা দেবে। আমরা জানি যে চীনের উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে এবং তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার চর্চা আছে।
তবে এবারে ভ্যাকসিন পেতে কেবল চীনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে রাজি নন বলে জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমরা অন্য উৎস থেকেও ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। চীনের ভ্যাকসিন এখানে উৎপাদন করে, আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি।
ভ্যাকসিন সহায়তার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘ দিনের। এই ভ্যাকসিন সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। চীন আমাদের এখানে একাধিক মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। এখন রমজান মাস চলছে। এই মাস সংযমের, এই মাস ক্ষমা করে দেওয়ার। সামনের দিনে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে, এই বিশ্বাস করি।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ঈদুল ফিতর আসন্ন। এখন রমজান মাস চলছে। বাংলাদেশের সব মুসলিমদের ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানাই। এছাড়াও আজ (বুধবার) বিশেষ একটি দিন। আজ আন্তর্জাতিক ‘নার্সেস ডে’। আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সহযোগিতায় সিনোফার্মের ৫ লাখ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন হস্তান্তরের জন্য এ দিনটিই বেছে নিয়েছি।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে করোনা নিয়ে বিগত দিনগুলোতে একত্রে কাজ করছি। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা ভবিষ্যতেও করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করে যাব। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা মারণঘাতী এই ভাইরাস সমূলে উৎপাটন করতে পারব।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিশ্বের সবার জন্য বা ‘পাবলিক গুডস’ হিসেবে উৎপাদন করা নিয়ে দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চীন সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া এপ্রিল ২৭ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাড়াদান নিয়ে এ অঞ্চলের ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের দ্রুত ফলের প্রতিফলন এটি।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি না বললেই নয়— গত বছর যখন চীনের কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং আমাদের চিকিৎসা সামগ্রী দরকার ছিল, তখন আমরা বাংলাদেশের সহযোগিতা পেয়েছি। এ কক্ষেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমার হাতে চিকিৎসা সরঞ্জাম তুলে দিয়েছিলেন। তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
ছবি- হাবিবুর রহমান
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর
চীনা ভ্যাকসিন ড. এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যাকসিন হস্তান্তর রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সিনোফার্ম স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক