‘কোয়াড নিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাংলাদেশের আছে’
১৩ মে ২০২১ ০০:৫৭
কূটনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ‘কোয়াড’ নিয়ে এবার মুখ খুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলছেন, এই ইস্যুতে চীনের বক্তব্য সম্পর্কে তারা অবগত। তবে চীন যাই বলুক না কেন, বাংলাদেশ এই ইস্যুতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে এবং সেই অধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র শ্রদ্ধাশীল।
মঙ্গলবার (১১ মে) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নেড প্রাইস এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত— এই চার দেশের কৌশলগত জোটকে ‘কোয়াড’ নামে ডাকা হয়। এই জোট সম্প্রসারণ করে এতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ দেখা গেছে। তবে এই জোটকে ‘চীনবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
এ প্রসঙ্গ টেনে ব্রিফিংয়ে নেডের কাছে একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রশ্ন রেখে বলেন, খবরে নিশ্চয় দেখেছেন যে কোয়াডে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে চীন বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই ইস্যুতে আমি দুইটি বিষয় জানতে চাই— কোয়াডকে কি সম্প্রসারণ করা হবে? এবং দ্বিতীয়ত, চীনের এমন বক্তব্যকে কিভাবে দেখছেন।
এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই নেড প্রাইস বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিষয়ে আমরা অবগত। তবে আমরা যেটি বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি কিভাবে ঠিক করবে, সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। তাদের এই অধিকারের প্রতিও আমরা শ্রদ্ধাশীল।
আরও পড়ুন-
- কোয়াড নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্ষতি হবে— ‘হুঁশিয়ারি’ চীনের
- বেইজিংকে ঢাকার জবাব— বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অসামান্য শক্তিশালী’ সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন নেড প্রাইস। তিনি বলেন, আমরা দুইটি দেশ আমাদের অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবিক বিভিন্ন ইস্যুর মতো বিস্তৃত পরিসরের বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আমরা কাজ করি।
কোয়াড প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, কোয়াড একটি অনানুষ্ঠানিক কিন্তু প্রয়োজনীয় বহুপাক্ষিক কৌশল যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো সমমনা গণতান্ত্রিক দেশগুলো বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়াই এর উদ্দেশ্য।
কোয়াড নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা তুঙ্গে ওঠে গত ২৭ এপ্রিল চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি’র বাংলাদেশ সফরে। ঝটিকা ওই সফরে ফেঙ্গহি বাংলাদেশের কাছে অনুরোধ করেন, বাংলাদেশ যেন কোয়াডে যুক্ত না হয়।
এর মধ্যেই সোমবার (১০ মে) ঢাকার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ওই সময় তার কাছে জানতে চাওয়ায় হয়, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কী জবাব দিয়েছে। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত যা বলেন, সেটি নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘কোয়াড হচ্ছে বৈশ্বিক একটি ছোট জোট, যারা চীনের বিপক্ষে। এরা চীনবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। এই ছোট জোটের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। বাংলাদেশ কোনোভাবে এই জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যথেষ্ট ক্ষতি হবে।’
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যকে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের হুঁশিয়ারি বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বরাবরই বলে আসছেন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী।
এক অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরা নির্ধারণ করব। যেকোনো দেশ তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে, আমরা আমরা তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনব। তবে আমরা কী করব বা কী করব না, জনগণের মঙ্গলের দিকটি বিবেচনায় রেখে সেই সিদ্ধান্ত আমরাই নেব।’
এর মধ্যে বুধবার (১২ মে) বাংলাদেশকে সিনোফার্মার ৫ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে চীন। এই ভ্যাকসিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও রাষ্ট্রদূত লি জিমিং দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে ‘কোয়াড’ ইস্যুতে কোনো কথা না হলেও দুই দেশই একযোগে কাজ করে করোনা মোকাবিলার প্রত্যয় জানিয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর
কোয়াড চীনা রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন নেড প্রাইস মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লি জিমিং