Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংঘাতে ৬৫ ফিলিস্তিনি ও ৬ ইসরাইলি নিহত, সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা


১৩ মে ২০২১ ০৩:৩৪

বুধবার দিনভর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করেছে ইসরাইল। ওই দিন ফিলিস্তিনও ইসরাইলে ভারী রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে। উভয়পক্ষের এমন সহিংসতা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এদিকে ওই ভূখণ্ডে আরব-ইহুদি মিশ্র বাসিন্দাদের শহরগুলোতে দাঙ্গা শুরু হয়েছে। এসব শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরাইল।

গত সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলে ১ হাজারের বেশি রকেট ছুঁড়েছে হামাস। ওই দিন থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আর হামাসের রকেট হামলায় ৬ ইসরাইলির প্রাণ গিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের ছুঁড়া প্রায় এক হাজার রকেটের মধ্যে অন্তত ৮৫০টি ইসরাইলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ‘আয়রন ডোমে’ বাঁধা পেয়ে আকাশেই ধ্বংস হয়েছে বা ইসরাইলের ভূমিতে আঘাতে হেনেছে। আর বাকি রকেটগুলো গাজা উপত্যকাতেই পড়েছে।

ইসরাইল আরও জানিয়েছে, তাদের বিমান হামলায় হামাসের এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। তারা হামাসের মিসাইল ঘাঁটি ও অন্যান্য স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে। বুধবার ইসরাইল গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ১৪ তলা একটি ভবনে বিমান হামলা চালায়। এতে ভবনটি ধসে পড়ে। ইসরাইলের দাবী—ওই ভবনে হামাসের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর কার্যালয় ছিল। ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজা শহরে এ নিয়ে  তিনটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, ইসরাইল বেসামরিক আবাসিক ভবনে হামলা চালাচ্ছে। যদিও ইসরাইল দাবি করেছে, হামলার আগে বাসিন্দাদের ভবনগুলো খালি করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। তবে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওইসব ভবনে বেসামরিক নাগরিকও প্রাণ হারিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় তাদের এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন কমান্ডারের মৃত্যুর খবরও জানিয়েছে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সংবাদমাধ্যমগুলো। নিহতদের মধ্যে সংগঠনটির গাজা শহরের সামরিক প্রধান বাসেম ইসাও রয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স হামাসের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে জানায়, সংগঠনটি বলেছে, ‘নিহত যোদ্ধাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হাজার হাজার নেতা ও অনুসারী প্রস্তুত রয়েছেন’।

এদিকে বুধবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতেনয়াহু বলেছেন, ‘হামাসের উপর অভিযান মাত্র শুরু হলো। আমরা এমন হামলা চালাবো যা হামাস স্বপ্নেও ভাবেনি’। এর জবাবে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ হুশিয়ারই দিয়ে বলেন, ‘যদি ইসরাইল সংঘাত বাড়াতে চায়, তবে আমরাও প্রস্তুত আছি’।

অন্যদিকে হামাসের অব্যাহত রকেট হামলায় ইসরাইলের বেশ কিছু শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, বুধবার (১২ মে) সকালে হামাসের রকেট হামলায় ৫২ বছর বয়সী এক ইসরাইলি আরব ব্যক্তি এবং তার ১৬ বছরের মেয়ে নিহত হয়েছেন। এ সময় তার স্ত্রী গুরুতর আহত হয়। তারা ব্যক্তিগত গাড়ি করে যাওয়ার সময় রকেটটি আঘাত হানে। এতে ঘটনাস্থলেই বাবা-কন্যা নিহত হন। এ নিয়ে হামাসের রকেট হামলায় ইসরাইলে ৬ জন নিহত হয়েছেন।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইহুদিদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সিনাগগ এবং বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তারা ইহুদিদের দ্বারা একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে পাথর ছুড়ে মারার খবর পেয়েছে, যা একজন ইসরাইলি আরব চালাচ্ছিলেন। যেসব শহরে আরব ও ইসরাইলিদের বসবাস সেসব শহরগুলোতে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়েছে। দাঙ্গা ঠেকাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতেনয়াহু।

উভয়পক্ষের এমন সংঘাতে আন্তর্জাতিক মহলও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টোনি ব্লিনকেন ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে বলেছেন, ‘রকেট হামলা থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার অধিকার ইসরাইলের আছে’। তবে তিনি বেসামরিক জনগণের হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরাইলের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলেও সতর্ক করেন।

উভয়পক্ষকে সংঘাত থেকে নিবৃত্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এছাড়া তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আরও এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি।

সংঘাত নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের দূত টর ওয়েনেসল্যান্ড। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি’। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে জাতিসংঘ।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে নামাজরত ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি পুলিশ। এ সময় রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এর পর থেকে সোমবার পর্যন্ত আল আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনি মুসল্লি ও ইসরাইলি পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এতে কয়েকশো ফিলিস্তিনি আহত হয়।

সোমবার ফিলিস্তিনের হামাস ইসরাইলে রকেট হামলা চালায়। জবাবে ওই দিনই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে গাজায় এ পর্যন্ত শিশুসহ ৬৫ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। অপরপক্ষে হামাসের সিরিজ রকেট হামলায় ইসরাইলে এ পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আরব নিউজ, জেরুজালেম পোস্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর