ফেরি ঘাটে নিহতদের ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নোটিশ

ফাইল ছবি

ঢাকা: মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে পদদলিত হয়ে নিহত প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মে) মানবাধিকার সংস্থা ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাওছার এ নোটিশ পাঠান।

আইনি নোটিশ ইমেইল ও কুরিয়ারযোগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালককে পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে আগামী তিন দিনের মধ্যে নিহত প্রত্যেককের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ফেরি থেকে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছেন। লকডাউনকালে দূরপাল্লার বাসসহ আন্তজেলার যাত্রীবাহী বাস বন্ধ রয়েছে।

যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নিয়োজিত রয়েছে। এত কিছুর পরেও পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে ঘরমুখো মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার ঠেকানো যায়নি। হাজার হাজার মানুষ গত কয়েকদিনে পদ্মা নদীর পার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ঘাটে জড়ো হয়েছেন। লকডাউনের কারণে ফেরিগুলো বন্ধ থাকার ফলে হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষমান ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত সংখ্যক ফেরি চালু করলে হাজার হাজার মানুষ হুড়োহুড়ি করে ফেরিতে উঠে পড়েন। ফেরির যানবাহন রাখার খোলা জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রখর রোদের তাপে ফেরি যখন বাংলাবাজার ঘাটের কাছাকাছি আসে, তখনই অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। পানির পিপাসায় হাঁসফাঁস করতে থাকেন তারা। ফেরি ঘাটে পৌঁছলে অসুস্থ যাত্রীদের মধ্যে পাঁচজনকে মৃত পাওয়া যায়।

এছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়েন অর্ধশতাধিক যাত্রী। নিহতদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালিক গ্রাম এলাকার নিপা আক্তার (৩৪) এবং শরীয়তপুরের এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আনসার মাতব্বর (১৪) পরিচয় পাওয়া গেছে। ফেরিগুলোতে অতিরিক্ত ভিড়ে পদদলিত হয়ে ও অক্সিজেনের অভাবে যাত্রীরা নিহত হন বলে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ।

নোটিশে আর বলা হয়, ফেরিগুলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিটিএ’র সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ব্যর্থতার কারণেই এতগুলো প্রাণ অকালে ঝরে গিয়েছে। তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় পাঁচ জনের মৃত্যুসহ অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতলে আছেন যাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। ফলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন।

নোটিশে আগামী তিন দিনের মধ্যে নিহত প্রত্যেককের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তাছাড়া ফেরি পারাপারের যাত্রীদের বিমার আওতায় আনা, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনায় বিমা থেকে অর্থ দেওয়া যায় এবং ফেরিঘাটে সংঘটিত দুর্ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনি আওতায় আনা যায়— এ বিষয়েও অনুরোধ করা হয়েছে নোটিশে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

cache/2021/05/123- ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য আইনি নোটিশ ফেরিঘাটে পদদলিত হয়ে নিহত