Tuesday 08 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাপা পড়ে যেত আরেকটি গণধর্ষণ, মেসেজ পেয়ে আসামি গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২১ ১৭:৪৩ | আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ১৭:৪৪

ঢাকা: মা মারা গেছেন ছোটবেলায়। বাবা আবার বিয়ে করেছেন। সেখানে ঠাঁই হয়নি মেয়েটির। বয়স ষোল-সতের। থাকে দাদির সঙ্গে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। দাদিকে নিয়ে কষ্টের সংসার। সিরাজগঞ্জে রায়পুরে মেয়েটির এক বান্ধবী থাকে। সে বলেছে, একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। উপায়ান্ত না দেখে চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে মেয়েটি। গন্তব্য সিরাজগঞ্জের রায়পুর।

করোনায় যাতায়াত ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তাই ভেঙে ভেঙে তাই যেতে হচ্ছে তাকে। যাত্রাপথে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তখন একা কী করবে, কোথায় যাবে- ভেবে পাচ্ছিল না মেয়েটি। রেল স্টেশনে কিছুক্ষণ একা দাঁড়িয়ে থাকে। খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উপায় অথবা নিরাপদে রাতটা পার করার কোনো আশ্রয়।

বিজ্ঞাপন

এমন সময় স্টেশনের পাশে এক লেগুনা চালক এগিয়ে আসে তার দিকে। সবকিছু ‍শুনে তাকে সিরাজগঞ্জ পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পথে ওই চালকের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন যুবক। তারা মেয়েটিকে নিয়ে হাতিয়া ও সল্লার মাঝামাঝি ছোট বটতলা গ্রামের দিকে চলে যায়। সেখানে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ধানক্ষেতে নিয়ে যায় টেনে হিঁচড়ে। এরপর তারা পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে মেয়েটির ওপর। তাকে দলবেধেঁ ধর্ষণ করে, রক্তাক্ত করে। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয় তারা। অসুস্থ শরীরে মেয়েটি কোনোরকমে বেঁচে ফেরে।

পরে মেয়েটি একজন ভদ্রলোক দেখে বুঝতে পারেন তার কোনো সমস্যা হয়েছে। ওই লোক মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে বিস্তারিত। তখনও মেয়েটি ভয়ে কাঁপছিল। কারও কাছে সাহায্য চাওয়ারও মানসিকতা ছিল না তার। তার ধারণা, পশুগুলো আবারও তাকে খুঁজে বের করবে। তার ওপর নির্যাতন করবে। মেয়েটিকে খুব বেশিক্ষণ অনুসরণ করতে পারেননি ভদ্রলোক।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাটি ঘটে ৬ মে। বিষয়টি হয়তো ওখানেই শেষ হতো। কেউ কোনোদিন জানতেও পারতো না। নিপীড়নের যাতনা আর ভয় একাকী বয়ে বেড়াতো মেয়েটি। কিন্তু, কি মনে করে ভদ্রলোক পুলিশকে বার্তা পাঠালেন। মেয়েটির ওই ঘটনার বিস্তারিত লিখলেন বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে। সেটিও লিখলেন ঘটনার ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ মে ২০২১-এ।

পরে বার্তাটি ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কালিহাতি সওগাতুল আলমকে পাঠিয়ে দ্রুত তদন্ত করে মেয়েটি ও তার ধর্ষকদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। ওসি কালিহাতির তৎপরতায় ইন্সপেক্টর তদন্ত রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে, এসআই রাজু আহমেদ এবং এএসআই তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম এ বিষয়টি তদন্তে নামে। এক পর্যায়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পায় তারা।

ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ কোনো ক্লু না থাকায় প্রথমে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটিকে শনাক্ত করে। এমনকি তার দাদির ঠিকানাও খুঁজে পায় পু‌লিশ। সেখা‌নেই পাওয়া যায় তা‌কে। সেখান থেকে তাকে কালিহাতি থানায় আনা হয়। তাকে অভয় দেওয়া হয়। আশ্বাস দেওয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার।

মেয়েটির বর্ণনা ও দেওয়া তথ্যমতে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। গতরাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ তিন ধর্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মামলা হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন। মেয়েটির পুনর্বাসনের জন্যও চেষ্টা করছে পুলিশ। বরাব‌রের ম‌তো পুরো প্রক্রিয়ায় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরামর্শক এবং সমন্বয়ক হিসেবে পাশে থেকেছে।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মো. লালন (২০), মো. রাসেল, মো. সুমন, মো. রিপন। এদের সবাই টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার শল্লা গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

কালিহাতি কিশোরী গণধর্ষণ টপ নিউজ টাঙ্গাইল

বিজ্ঞাপন

খুলনায় ৩ যুবককে কুপিয়ে জখম
৮ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫৪

আরো

সম্পর্কিত খবর