আরেকটি ‘বিবর্ণ’ ঈদ বিএনপির
১৩ মে ২০২১ ১৮:১৫
ঢাকা: ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু এই ঈদ একেক জনের কাছে একেক রকম। বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের ঈদ সবসময় একরকম হয় না। ক্ষমতায় থাকলে তাদের ঈদ যেমন হয় একরকম, ক্ষমতার বাইরে থাকলে তেমনি ঈদ হয় আরেক রকম। টানা ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের ঈদ গত কয়েক বছর ধরে নিরানন্দেই কাটছে।
মামলা, জেল-জরিমানা, গ্রেফতার-হুলিয়ায় জর্জরিত দলটির নেতারা খুব একটা স্বস্তিতে ঈদ করতে পারেননি গত কয়েক বছর। এবারের প্রেক্ষাপট আরও নাজুক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন ‘মারাত্মক’ অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একদিন আগে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা এখনো ‘ক্রিটিক্যাল’। আর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত বছরগুলোর মতই আট হাজার মাইল দূরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে থাকছে না দলের পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় আয়োজনও।
তারপরও থেমে থাকবে না বিএনপি নেতাদের ঈদ। ব্যথিত মন নিয়ে ‘বিবর্ণ’ ঈদ উদযাপন করবেন তারা। করোনা মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতি যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানেই ঈদ উদযাপন করবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা অবস্থান করছেন ঢাকায়। তারা ঢাকাতেই ঈদ করবেন। অল্প কয়েকজন ঈদ করবেন গ্রামে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঈদ কাটবে এভারকেয়ার হাসপাতালে। পোস্ট-কোভিড জটিলতা নিয়ে এই মুহূর্তে তিনি সেখানে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। পর পর চারটি ঈদ কারাহাসপাতালে কাটানোর পর গত দুইটি ঈদ বাসায় করেন খালেদা জিয়া। এবারের ফের হাসপাতালে ঈদ হবে তার।
গত কয়েক বছরের মতো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঈদ করবেন লন্ডনে। স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে ঈদ করবেন তিনি।
বিএনপি চেয়াপারসনের প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ নয়, শুধু ঈদের নামাজটা আদায় করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। নামাজ শেষে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণ ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করবেন তারা।’
শায়রুল কবিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরুউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঈদের নামাজ পড়বেন চট্টগ্রামে।
সিনিয় নেতাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খন্দকার মোক্তাদির, আমানউল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ঢাকায় ঈদ করবেন।
ঈদের নামাজ শেষে তাদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করবেন।
অন্যদিকে সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, হারুনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম নিজ নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সারাবাংলাকে জানান, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন এবং করোনায় মারা গেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন বিএনপির নেতারা। সারাদেশে সহস্রাধিক দলে বিভক্ত হয়ে ভিক্টিম পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করবেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি ঈদ আনন্দ অনেকটাই বিবর্ণ করে দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের মানুষও খুব স্বাচ্ছন্দে ঈদ করতে পারবে না। আর আমাদের পক্ষেও ঈদের আনন্দ সেভাবে উপভোগ করার সুযোগ নেই। দলের চেয়ারপারসন অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত এক বছরে দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ প্রায় চার শতাধিক নেতাকর্মী করোনায় মারা গেছেন। সব মিলে এবারের ঈদ অনেকটা আনন্দহীন, বিবর্ণ ঈদ-ই হবে।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর