দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের ব্যবস্থা নিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
১৩ মে ২০২১ ১৯:২৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এরই মধ্যে সরকার বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন এনে দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে তিন কোটি ভ্যাকসিন কেনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। পাশাপাশি দেশেই যেন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারি, সে ব্যবস্থাও নিয়েছি। নিজেদের ভ্যাকসিন তৈরিতে আমাদের কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে আমরা দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব।
বৃহস্পতিবার (১৩ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর ধারণকৃত এই ভাষণ সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রচারিত হয়।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কয়েকটি পেশার কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা লকডাউন বা চলাচলের বিধিনিষেধ বলবৎ করতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন— এ কথাও উল্লেখ করেন তিনি। চলমান পরিস্থিতিতে সরকার প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বহু স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন সংস্থার কর্মকতা-কর্মচারী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া, গত এক বছরে আমরা আমাদের অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি। আমি সকলের রুহের মাগফিরাত ও আত্মার শান্তি কামনা করছি। শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা যেমন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছি, তেমনি আক্রান্তদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়েছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় যুক্ত করেছি। গত মাসে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটে দুই হাজার শয্যার কোভিড-১৯ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১৬৬ জন ডাক্তার, ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স এবং প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোসহ দেশের ১৩০টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রিয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। এই ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসু বলে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি যথাসম্ভব ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সেই সঙ্গে আপনারা নিজেরা গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।
ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে কার্যকর ও পরীক্ষিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ভ্যাকসিন দিয়েই আমরা গণ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু করেছি। আপনারা জেনেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার বিকল্প উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে রাশিয়া ও চীনের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে এরই মধ্যে আমরা ভ্যাকসিন পেয়েছি। আমরা ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আমেরিকার কাছেও অনুরোধ জানিয়েছি। ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাব।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা এক কোটি ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব শিগগিরই দেশে ভ্যাকসিন আসতে শুরু করবে। তাছাড়া, দেশেই যেন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারি, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের ভ্যাকসিন তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সব নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর