Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা সংকট: বরাদ্দ বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ মে ২০২১ ১১:৩২

ঢাকা: চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মতো আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট পরিকল্পনাতেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকট বিবেচনায় নিয়ে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশে নতুন করে দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছেন। আর চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন দেশের মোট শ্রমশক্তির তিন শতাংশেরও বেশি মানুষ। এই জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতেই আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর সুবিধাভোগীদের সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসছে বাজেটে তা আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের চেয়ে নতুন বছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২৪ শতাংশ। দুই দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা, তাদের জন্যই মূলত বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, বরাদ্দের সঙ্গে বাড়বে উপকারভোগীর সংখ্যাও। বাড়বে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের সংখ্যা, দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবি মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য জীবন মান উন্নয়ন ভাতাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ খাতে যেসব কর্মসূচি চলমান, তার পরিধিও বাড়বে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের চলমান কার্যক্রমের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি বলেন, গত একবছর ধরে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী কাজের সুযোগ হারিয়েছে। এদেরও চলমান কর্মসূচির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আর সে জন্যই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেছি। আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের আকার চলমান বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেশি হবে।

এদিকে, করোনার অভিঘাতে যারা কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, তাদের নিয়ে গবেষণার প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা বিষয়ক পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এবার ধাপে ধাপে কয়েক ধরনের গবেষণা করেছি। লকডাউনের প্রথম দিকে যে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পেয়েছি, এখন তার থেকে কিছুটা কমে এসেছে। তবে এখানে কয়েক ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ওই গবেষণায় উঠে এসেছে— নিম্ন আয়ের যারা, তারা দরিদ্র হয়েছেন। আবার যারা বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন, তাদের আয় কমে গেছে। হয়তো তারা অন্য কাজে ঢুকেছেন, সেখানে আয় কম কিংবা নিয়মিত পারিশ্রমিক পান না। আবার আরেকটি শ্রেণি আছেন, যারা বিদেশ থেকে এসে বেকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে এবারও একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।

ড. মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা দেখছি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে যেভাবে দাঁড়ালে মানুষের জীবন মানে প্রভাব পড়বে, সে পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে বলেছি। সরকারের অনেকগুলো ভালো উদ্যোগ চলমান থাকলেও নতুন করে যারা কাজ হারানোর তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাদেরও এসব কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এদিকে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক সমীক্ষা বলছে, যোগ্যদের ৪৬ শতাংশ এখনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে রয়েছে। আবার এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে স্বচ্ছলরাই ভাতা পান ৭৫ শতাংশ। আর এ পরিস্থিতি রাজনৈতিক কারণেই তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা এবার আরও বলেছি— এই যে বিশাল একটি শ্রেণি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে রয়েছে, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বা এনজিওদের দিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে পারে সরকার। তাহলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সহজেই যাবে না। এ পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই সবাইকে চলতে হবে। সরকারকে এভাবে কখনো লকডাউন, আবার কখনো জরুরি পদক্ষেপের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে। এ অবস্থায় দেশের দরিদ্রের সংখ্যা যেহেতু বাড়ছে, একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর চাকরির সুযোগও কমে আসছে। সেজন্য সরকারকে এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের বয়স্ক ও বিধবা ভাতাপ্রাপ্তদের সংখ্যা বর্তমানে ৮৮ লাখ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আট ধরনের ভাতা দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এ বছর দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় দরিদ্র ও প্রবীণ ব্যক্তিদের ভাতা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলমান আছে মোবাইলের মাধ্যমে এদের কাছে ভাতার টাকা পাঠানোর উদ্যোগ।

এর বাইরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর, কাবিখাসহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ১১টি কর্মসূচি চলমান। এই তালিকায় আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপবৃত্তি কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিও।

করোনার অভিঘাতে যারা কাজ হারাচ্ছেন, তাদের এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদই দিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। আর তারই প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আগামী বাজেটে, যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে যোগ হচ্ছে বাড়তি প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

করোনা সংকট সামাজিক নিরাপত্তা খাতে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর