দেশে শনাক্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে ক্ষতিকর ই৪৮৪কিউ মিউটেশন নেই
১৪ মে ২০২১ ২৩:১৪
ঢাকা: দেশে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত বি.১.৬১৭.২। ভারত থেকে আসা দুই ব্যক্তির নমুনা সিকোয়েন্সিং করে এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল সংগ্রহ করা আরও কমপক্ষে চারজনের নমুনায় একই প্যাঙ্গো লাইনেজের ভ্যারিয়েন্টটি দেখা গেছে। এই চারজনও ভারত ফেরত হওয়ার তাদের নমুনাগুলোও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলেই আশঙ্কা। এছাড়া ৬ মে’র সংগ্রহ করা নমুনায়ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত বি.১.৬১৭.২ পাওয়া যায় বলে দাবি করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) গবেষকরা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তাতে ই৪৮৪কিউ মিউটেশনটি নেই। এটি একটি ক্ষতিকর মিউটেশন বলে পরিচিত। যেহেতু এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি তাই ভ্যাকসিনের উপরে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তবে ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেনো সবাইকে মাস্ক পরতেই হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।
দেশে এখন পর্যন্ত সবচাইতে বেশি পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (সিএইচআরএফ)। এই প্রতিষ্ঠানটিতে সিকোয়েন্সিং করা হয় অণুজীববিজ্ঞানী ডা. সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে। ডা. সেঁজুতি সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে কিন্তু বেশ কয়েকটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যে ভেরিয়েন্টটি (বি.১.৬১৭.২) পাওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে তাতে ই৪৮৪কিউ মিউটেশনটি নেই।’
তিনি বলেন, ‘ই৪৮৪কিউ মিউটেশনের কারণে মূলত ভ্যাকসিন অনেক সময় অ্যান্টিবডিকে এস্কেপ করতে পারে। যেহেতু সেটি নেই, তাই এটা ধারণা করা যেতে পারে যে, এটাতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা থাকবে। এক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বেশি।’
সেঁজুতি সাহা আরও বলেন, ‘গতকাল পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন বলে ঘোষণা করেছে। কারণ যুক্তরাজ্যে এটা ছড়ানোর হার ১.৬১৭.২ এর মতনই বেশি হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, ভারতের এই ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টকে রিপ্লেস করে ফেলছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ভালো সংবাদ হচ্ছে যেহেতু ই৪৮৪কিউ মিটেশনটি নেই তাই ভ্যাকসিন আমাদের এখানে কাজ করবে বলে আশা করি। এক্ষেত্রে যদি আগে কারও মাঝে সংক্রমণ হয়ে থাকে তবে তার ইম্যুনিটিও কাজ করবে বলে আশা করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘সিকোয়েন্সগুলো আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একইসঙ্গে যারা দেশের বাইরে থেকে আসবে তাদের সবাইকে কোয়ারেনটাইনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
কন্টাক্ট ট্রেসিং ও সিকোয়েন্সিং চালু রেখে আমাদের নজরদারি বাড়িয়ে সাবধানে থাকতে হবে ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলেও জানান এই অণুজীববিজ্ঞানী।
দেশে করোনাভাইরাসের পরিবর্তন ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন সৈয়দ মুক্তাদির আল সিয়াম। এই গবেষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিএসএআইডি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভারত থেকে আসা দুইজনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) শনাক্ত করা গেছে। আরও কয়েকজনের শরীরে পাওয়া গেছে প্রায় একই ধরনের ভাইরাস, যারা সবাই ভারত ফেরত। যেহেতু এরা সবাই ভারতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন, তাই সেখানকার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে- এটি কি বাংলাদেশের কমিউনিটিতে ছড়াচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং নিশ্চিত করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধ করা সম্ভব। এছাড়া বেশি বেশি জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে, এটি কমিউনিটিতে ছড়াচ্ছে কি না। এজন্য প্রাথমিকভাবে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে সিকুয়েন্সিংয়ের ব্যাপারে জোর দিতে হবে।’
মুক্তাদির আল সিয়াম আল সিয়াম বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড ইতোমধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টটিকে (বি.১.৬১৭.২) ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ঘোষণা করেছে। তাই আমাদের আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত সংক্রমণশীল হলেও অনেক বেশি মারাত্মক এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এটির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে বলে জানা গেছে। ফলে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে। তাই আমাদের উচিত সঠিকভাবে মাস্ক পরা, ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া এবং ভ্যাকসিন নেওয়া।’ এছাড়াও দেশে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের অধিক উপস্থিতি, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকাও রাখতে পারে বলে জানান এই গবেষক।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম