সিকোয়েন্সিংই হয়নি ডিএনসিসি হাসপাতালের ২ কোভিড রোগীর নমুনা
১৪ মে ২০২১ ২৩:০৭
ঢাকা: ভারত থেকে ফেরার পর করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯ পজিটিভ) আক্রান্ত দুই রোগীকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তথ্য ছড়িয়েছে, এই দু’জনের শরীরেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের (B.1.617) করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এই দু’জনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংই এখনো করা হয়নি। ফলে তারা সাধারণ করোনাভাইরাস নাকি এর বিশেষ কোনো ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত, সেটি বলার সুযোগই নেই।
শুক্রবার (১৪ মে) রাতে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানান ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
হাসপাতাল পরিচালক সারাবাংলাকে বলেন, ভারত ভ্রমণের রেকর্ড আছে— এমন দু’জন নারী কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন। আমাদের হাসপাতালে আসার পরে আমরা তাদের ভর্তি নিয়ে নিয়েছি। সম্পর্কে তারা শাশুড়ি-পুত্রবধূ। তবে আমাদের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ভারত থেকে আসার পরে যাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যাবে, তাদের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। তাদের উপসর্গ থাকায় আমরা এখানে তাদের আলাদা রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। হয়তো আগামীকালই তাদের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হবে।
ভারত ফেরত এই দু’জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) নমুনা পরীক্ষায় তাদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখনো তাদের নমুনা সিকোয়েন্সিং করা হয়নি। তাই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কিছু এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। কারণ সিকোয়েন্সিং হলে তবেই জানা যাবে তারা বিশেষ কোনো ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কি না।
কিছু গণমাধ্যমে তাকে উদ্ধৃত করেই এই দু’জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে। তবে কাউকে এমন বক্তব্য দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেন হাসপাতাল পরিচালক।
তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যমে দেখছি আমার নাম দিয়ে বলা হচ্ছে যে তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। কিন্তু যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, আমি স্পষ্ট করেই বলেছি— ভারত ফেরত ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হলেই তার শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থাকবে, এটি বলার সুযোগ নেই। এ বিষয়টি নিয়ে বারবার অনুরোধ করার পরও বিভ্রান্তি ছড়ানো দুর্ভাগ্যজনক। এমন তথ্য কেউ প্রচার করে থাকলে সেটি মিথ্যাচার হবে। কারণ জিনোম সিকোয়েন্স করার আগে ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কোনো কিছু বলার কোনো সুযোগই নেই।
তবে যেহেতু এই দু’জন ভারত থেকে এসেছেন, তাই তাদের অন্যদের থেকে আলাদা রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন সারাবাংলাকে বলেন, ভারত থেকে কেউ এলেই যে তার মাঝে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে, বিষয়টি এমন নয়। সিকোয়েন্সিং একটি চলমান প্রক্রিয়া। সিকোয়েন্সিং হলেই জানা যাবে, কার মধ্যে কোন ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবার মাঝেই একই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে— এমনটি বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নয়। তাদের নমুনার সিকোয়েন্সিং চলছে। সিকোয়েন্সিং হলে জানা যাবে তাদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো ভ্যারিয়েন্ট আছে কি না।
এর আগে, গত ৮ মে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত B.1.617 ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায় দেশে। ভারত থেকে আসা দুই ব্যক্তির নমুনা সিকোয়েন্সিং করে পাওয়া যায় এই ভ্যারিয়েন্ট। এছাড়া আরও চার জনের নমুনায় একই প্যাঙ্গো লাইনেজের ভ্যারিয়েন্ট দেখা যায়। এই চার জনও ভারত ফেরত হওয়ার তাদের নমুনাগুলোও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলেই আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পরবর্তী সময়ে ৪০ বছর বয়সী একজন নারীর নমুনা সিকোয়েন্সিং করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এই নমুনা সংগ্রহ করা হয় যশোর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে।
এর আগে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির জন্য। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে।
এর আগে, দেশে ২৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ২৬ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ১৪ দিন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। পরে ৮ মে এই বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়। এ অবস্থায় ভারত থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর