বাবার বিরুদ্ধে ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ
১৫ মে ২০২১ ০১:১৬
মৌলভীবাজার: একবছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের ৭ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকার এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে। এ ঘটনা জানতে পেরে প্রতিবাদ করায় স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মেয়েটির মা। স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে এ ঘটনার বিচার চাইলেও তিনি এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়েটির মা বলছেন, স্বামী-শাশুড়ির ভয়ে তিনি পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারছেন না। আইনি সহায়তার জন্য তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা কামনা করেছেন।
জানা যায়, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একবছর আগে শিশুটির মা বাড়িতে না অবস্থায় বাবার কাছে ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনা তার মাকে বলার চেষ্টা করলেও তিনি ‘ছোট মানুষের ভুল’ ভেবে তা উড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি মেয়েটি ফের ধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন মায়ের টনক নড়ে।
শিশুটির মা সারাবাংলাকে বলেন, কিছুদিন আগে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম। ফেরার পর দেখি মেয়েটি সবসময় কী এক ভয়ের মধ্যে থাকে। কারও সঙ্গে কথা বলে না, চঞ্চলতা নেই। রাতে আমাকে ছাড়া ঘুমাতেই চায় না। রীতিমতো অসুস্থ হয়ে গেছে। একদিন রাতে আমার কাছে সব কথা খুলে বলে।
মেয়েটির মা আরও বলেন, এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা কখনো কল্পনাতেই আসেনি। মেয়ে এর আগেও আমাকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হওয়ার কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। এতটুকু একটা বাচ্চার সঙ্গে, তার নিজের বাবা এমন আচরণ করতে পারে— এ কথা কিভাবে ভাবতে পারি! সে কারণেই ভেবেছে, মেয়ে হয়তো ভুল করে কিছু বলছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, মেয়ের কথা তখনই শুনলে তাকে এতদিন ধরে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না। এখন তো আমার নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে।
এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘটনা জানার পর প্রতিবাদ করেছিলাম। স্বামী-শাশুড়ি ধরে মারধর করেছে। তারা অনেক ভয় দেখিয়েছে। মেয়েটাও অসুস্থ। তাই কোথাও যেতে পারি না। এর মধ্যেও লুকিয়ে লুকিয়ে থানায় গিয়েছি, উপজেলাতেও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে) গিয়েছি দুই দিন। কিন্তু ওসি স্যারকে পাইনি, ইউএনও স্যারকেও পাইনি। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানালেও তিনি কিছুই করেননি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বিশ্বজিৎ দেব বর্মার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। মেয়ে ও মেয়ের মা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এসেছে। সব ঘটনা বলেছে। কিন্তু এখানে স্থানীয়ভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ এটি ফৌজদারি অপরধ। বাবা নামের ওই নরপশুকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। আমি নিজেও চাই তার কঠোর ও সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। সেটি হতে হবে আইনি প্রক্রিয়াতেই।
ঘটনাটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, এরকম কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। শিশুটির মা বা অন্য কোনো স্বজন মামলা করতে এলে অবশ্যই আমরা সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো। তবে যেহেতু এখন জানতে পারলাম, আমরা একটি ছায়া তদন্ত করে ঘটনাটি বিশ্লেষণ করব। আমরা অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করব।
সারাবাংলা/টিআর