১ সপ্তাহে পরীক্ষা, সংক্রমণ, মৃত্যু— সবই এক-তৃতীয়াংশ কমেছে
১৫ মে ২০২১ ১৯:৩৮
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক। এর মধ্যেই ঈদুল ফিতর ঘিরে দেশব্যাপী জনচলাচল ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও নানা কৌশলে মানুষ সারাদেশেই চলাচল করেছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষাও কমে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, একইসঙ্গে কমে গেছে সংক্রমণ শনাক্তের হার, করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু এবং করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের পরিমাণও। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় সবগুলো পরিমাণই দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা তিন ভাগের একভাগ কমে গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ কমলেও সেটি কমছে মূলত নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে। যে কারণে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার প্রায় একই রয়ে গেছে। ফলে সংক্রমণ কমে যাওয়া বিশেষ কোনো বার্তা বহন করে না। এখনো সংক্রমণের হার যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনচলাচল হয়েছে, তাতে বরং সামনের দিনগুলো নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হবে।
শনিবার (১৫ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৬ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ১২৪ জন মারা গেছেন, সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লাখ ২১ হাজার ৪৩৫ জন। বাকিদের অনেকে নিজ নিজ বাসায় এবং বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী আজ শনিবার শেষ হওয়া সপ্তাহটি বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরের ৬২তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ। আর চলতি বছরের জন্য এটি ছিল ১৯তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ। আর আগের সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে এসেই করোনা সংক্রান্ত সবগুলো সংখ্যাই কমে গেছে। আর এগুলো কমে যাওয়ার অনুপাতও সবগুলোর একইরকম।
গত ২ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত ছিল দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর ৬১তম ও এ বছরের ১৮তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ। এরপর ৯ মে থেকে ১৫ পর্যন্ত ছিল ৬২তম ও এ বছরের ১৯তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ।
অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরের ৬১তম তথা এ বছরের ১৮তম সপ্তাহে দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫৮টি। সেখানে সার্বিকভাবে ৬২তম ও এ বছরের ১৯তম সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৮ হাজার ৩০৭টি। সে হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় একই অনুপাতে কমেছে সংক্রমণও। আগের সপ্তাহে যেখানে ১১ হাজার ৫৪৩ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে এ সপ্তাহে এসে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৯ জনের শরীরে। এ ক্ষেত্রেও সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ কমেছে ৩৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে একই অনুপাতে সংক্রমণ কমে যাওয়ার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ শনাক্তের হারেও। আগের সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে, সবশেষ সপ্তাহে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ শনাক্তের হার কমেছে মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ পয়েন্ট। বলতে গেলে সংক্রমণের হার একই রয়েছে।
এদিকে, সংক্রমণের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ও করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যাও কমেছে এ সপ্তাহে এসে। আগের সপ্তাহে ৩৬৮ জন মারা গিয়েছিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ে। সে তুলনায় এ সপ্তাহে মারা গেছেন ২৪৬ জন, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১২২ জন কম। শতাংশ হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু কমেছে ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
আর ৬১তম সপ্তাহে সারাদেশে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ২২ হাজার ১৬২ জন। আর ৬২তম সপ্তাহে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৬০২ জন। অর্থাৎ এই সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যাও কমেছে ৩৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর