কথা বলে কার্জন, কথা বলো মন
১৭ মে ২০২১ ১৮:৩৫
মানুষ যতখানি বলে, তারও চেয়ে বেশি রাখে লুকায়ে মনে। সেই মনে মনে তারপর কত শত চিন্তা মেলে ডানা, কত হাজারও স্বপ্ন যায় হারায়ে। তারপর একদিন আমাদের আর কিছুই মনে থাকে না।
যেইসব ব্যথা-আনন্দ-বিভ্রমে আমাদের বেঁচে থাকা, সেগুলো এবার প্রকাশ্য হোক। প্রকাশ্য হোক চিন্তা, প্রকাশ্য হোক প্রতিবাদও। সহ্য করতে করতে মুখ বুজে বেঁচে থাকার চেষ্টার বিপরীতে এই দাঁড়ানোর আহ্বান, এক কোন থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে তা— এমনই স্বপ্নে কথা বলার আয়োজন মূর্ত হয়েছে শতাব্দী প্রাচীন কার্জন হলের এক কোনে।
শিক্ষার্থীদের আড্ডা দেওয়ার একটা জায়গা ছিল, কার্জনের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে হাতের ডান পাশের দেবদারু ছায়াতলে। ভেঙে দেওয়া হয়েছিল সেই বসবার ছোট্ট জায়গাটুকুও। সেই ধ্বংসস্তূপের ওপরই গড়ে তোলা হয়েছে ফের আড্ডার স্থান। সেইখানে এবার জানানো হচ্ছে প্রাণ খুলে কথা বলবার আহ্বান। কার্জনের নানা কোনে পুরো শিক্ষাজীবন কাটানো কয়েকজন তরুণের উদ্যোগেই এই আয়োজন।
উদ্যোক্তাদের একজন হাসান মেহেদী সিফাত। সাবেক ফলিত পদার্থবিজ্ঞান (বর্তমান ট্রিপলই) বিভাগ থেকে স্নাতক এবং বায়োমেডিকেল ফিজিক্স ও টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি। কার্জনের এই শিক্ষার্থী তার উদ্যোগের বিষয়ে জানাচ্ছেন, ভেঙে দেওয়া বেঞ্চটা শুধু একটা বসার জায়গা তৈরির জন্য তারা বানাননি।
সিফাতের ভাষায়, “এই বেঞ্চটা আমরা একটা দর্শন বা ফিলোসফি যাই বলেন না কেন, সেটা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বানিয়েছি। আমরা যেই দর্শনটা বা ফিলোসফিটা ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি সেটা হলো— ‘আমরা মনে করি সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব, LET’S TALK।’ আর এই আলোচনাটা হতে হবে সব মুখোশ খুলে। চলুন আমরা রাখঢাক না রেখে, বিতর্ক না করে আলোচনা করি, কথা বলি।”
প্রাণ খুলে কথা বললে যে কত শত সমস্যার শুরুই হয় না, সেটাও এখন জানতে পারছেন তারা। উদ্যোক্তাদের আরেকজন ট্রিপলই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন আজিম। নিজের ফেসবুকে প্রতিদিন লিখে যাচ্ছেন তার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা। বলে যাচ্ছেন প্রাণ খুলে কথা বলার ফলে কত হাজারও সমস্যার মুহূর্তেই সমাধান মেলে।
সিফাত-আজিমদের বন্ধুরাও তাই সবাইকে জানাচ্ছেন আহ্বান কথা বলার। সবখানে, সব মুহূর্তে। ফেসবুকে বা মুখোমুখি— সবখানেই তারা সরব। আর মুখোশ খুলে কথা বলার আহ্বান নিয়েই কার্জনে দৃশ্যত বেঞ্চ পেতেছেন, যার ভেতরে পেতেছেন প্রাণ, অন্য প্রাণে মেলাতে।
সবােই মিলে কথা বলতে চাওয়া, কথা বলা— এটাকে আন্দোলনে পরিণত করতে চান সিফাত-আজিমরা। তাদের এই ভাবনার সঙ্গে থাকতে, এই দর্শনটাকে আরও ছড়িয়ে দিতে তাই আহ্বান জানিয়েছেন কার্জনে হাজির হতে। যারা পারবেন না, তারা না হয় ফেসবুকেই লিখুন— এমন আহ্বান তাদের। আর তার সঙ্গে #Lets_Talk হ্যাশট্যাগটা দেওয়ারও আহ্বান।
সারাবাংলা/এমও