Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেই মুসাকে এখন ‘চিনতে পেরেছেন’ বাবুল আক্তার

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ মে ২০২১ ১১:৫৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আলোচিত মিতু হত্যায় ‘কিলিং মিশনের প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত’ ছিলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও তাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। পাঁচ বছর পর একই ঘটনায় গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল স্বীকার করে নিয়েছেন, সেই মুসা ছিলেন তার সোর্স। তবে হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে মুসার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে এড়িয়ে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে গেছেন বাবুল আক্তার। তবে কয়েকটি প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিয়েছেন।’

মুসার বিষয়ে কোনো তথ্য দিয়েছেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুসা উনার সোর্স ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।’

হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে তাকে কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা হিসেবে শনাক্ত করে। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটে কর্মরত থাকার সময় ওই মুসা সোর্স ছিলেন বাবুল আক্তারের। কিন্তু সে সময় ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন।

বাবুল আক্তারকে গ্রেফতারের দিন গত ১২ মে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার অভিযোগ করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার তার সোর্স মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। এভাবে বাবুল আক্তার শুরু থেকে ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

‘ঘটনাস্থলের কাছ থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভির ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল, পরে জানা যায় সে বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট মুসাকে চেনা গেছে। কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসাকে নিয়ে বাবুল আক্তার কোনো সন্দেহের কথা বলেননি। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে নিয়ে পুলিশকে কিছু জানায়নি,’— বলেছিলেন পিবিআই প্রধান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য ছিল, হত্যাকাণ্ডের পর মুসাই প্রথম বাবুল আক্তারকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার মুসার কাছ থেকে কোনো ধরনের ফোন পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। বরং তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর তাকে প্রথম বাসার গৃহকর্মী ফোন করেছিলেন। তিনি ঘুমে থাকায় কল রিসিভ করতে পারেননি। এরপর ফোন করে ‘বাড়িওয়ালা’ বিষয়টি তাকে জানান।

বাবুল আক্তারের এই বক্তব্য পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে।

পাঁচ বছর আগে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক আছেন কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা। তবে তার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে ওই বছরের ২২ জুন প্রশাসনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না।

এদিকে সোমবার (১৭ মে) বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের দেওয়া পাঁচ দিনের সময়সীমা শেষ হয়েছে। পিবিআই সূত্র জানিয়েছে, আদালতে হাজিরের পর তিনি যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত না হন, সেক্ষেত্রে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবার মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাবুল যা করেছেন সবটাই ছিল তার অভিনয়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআই’র ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।

একই দিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

ওই দিনই বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলার আরেক আসামি মুসার ভাই সাইদুল ইসলাম শিকদার সাক্কুকে ১২ মে রাতে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাকেও চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এছাড়া বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় কারাগারে আছেন ওয়াসিম, আনোয়ার ও শাহজাহান। এর মধ্যে পিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াসিম ও আনোয়ারকে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

এসপি বাবুল কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা বাবুল আক্তার মাহমুদা খানম মিতু মিতু হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর