‘সাংবাদিক রোজিনার মামলা ত্রুটিপূর্ণ’
১৮ মে ২০২১ ১৫:৩৬
ঢাকা: প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করছেন তার আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার (১৮ মে) আদালতে মামলার শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, এটি মূলত ত্রুটিপূর্ণ মামলা। আসামিকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন। মামলার এজাহারের মধ্যে যে ডকুমেন্টসের কথা বলা হচ্ছে তার কোনো বর্ণনা এজাহারের মধ্যে নেই। যে জব্দ তালিকা আদালতে হাজির করা হয়েছে, সেই জব্দ তালিকা থেকে দেখা যায়, ডকুমেন্টসগুলো কথিত মতে আসামির কাছ থেকে নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজেই উপস্থাপন করেছেন।
মামলায় রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এ আদেশ দেন।
একই আদালত আগামী ২০ মে বৃহস্পতিবার তার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। সেই সঙ্গে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসারও আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের জানান, আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে রোজিনা ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আইন সবার জন্য সমান। আইনজীবী হোক, সাংবাদিক হোক বা যেই হোক না কেন। যা কিছু হোক আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে আটকে রাখতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, অনেক সময় মামলা রেডি করতে সময় লাগে। আটকে রেখে তারা পুলিশকে খবর দিয়েছে। পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে গেছে। তবে তাকে যদি অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয় তাহলে এর বেনিফিট আসামি পাবে।
রোজিনার পক্ষে এহেসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, মামলাটি আইনত ত্রুটিপূর্ণ মামলা। আসামিকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। কেননা মামলার এজাহারের মধ্যে যে ডকুমেন্টস এর কথা বলা হচ্ছে, সেই ডকুমেন্টস এর কোনো বর্ণণা এজাহারের মধ্যে নেই। যে জব্দ তালিকা আদালতে হাজির করা হয়েছে, সেই জব্দ তালিকা থেকে দেখা যায়, সেই ডকুমেন্টসগুলো কথিত মতে আসামির কাছ থেকে নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তার নিজেই উপস্থাপন করেছেন। কাজেই আসামির কাছে থাকার বিষয়ে কথিত আসামি চুরি করেছে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলো মানহানিকর এবং আপত্তিকর।
তিনি বলেন, আদালতকে বলেছি, ৩৭৯ ধারাকে যদি বিশ্বাস করতে হয় তাহলে এর উপাদান হচ্ছে যেকোনো বিষয়বস্তু চুরি করার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আর প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী অফিশিয়াল সিক্রেস অ্যাক্ট অনুযায়ী যদি বিশ্বাস করেন তাহলে কথিত মতে ঘটনাস্থল হচ্ছে সচিবালয়। সুতরাং পরস্পর বিরোধপূর্ণ দুই ধারা আদালতের কাছে সন্দেহ সৃষ্টি করে; প্রকৃত ঘটনাস্থল কোথায় এবং আদৌ ঘটনা ঘটেছিল কি না। আসামি তার মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘটনার পরিস্থিতির শিকার তিনি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। আদালতকে বলেছি, তিনি একজন নারী। আর আনা প্রতিবেদনের ভিত্তিকে আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আদালত সেটি বিবেচনায় নিয়ে রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন। জামিনের বিষয়ে বলেছি, ধারাগুলো জামিনযোগ্য। সুতরাং আসামির জামিন পাওয়া অধিকার। আদালত যথেষ্ট সময় নিয়ে শুনে জামিনের বিষয়টি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২০ মে) ধার্য করেছেন।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুসহ প্রমুখ রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। রোজিনা ইসলামের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, প্রশান্ত কুমার কর্মকর রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন।
সারাবাংলা/এআই/এসএসএ