Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোজিনাকে আটকে রাখা সংবিধান পরিপন্থী, দাবি মানবাধিকারকর্মীদের

রোকেয়া সরণি ডেস্ক
১৯ মে ২০২১ ২১:৪৮

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ের একটি কক্ষে দীর্ঘসময় আটকে রাখা, অসুস্থ অবস্থাতেও চিকিৎসা বঞ্চিত করা, ও পরে মান্ধাতা আমলের মামলায় থানায় প্রেরণের পরও জামিন না দেওয়াকে সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। এসময় তারা রোজিনা ইসলামের সঙ্গে সচিবালয় কক্ষে ঘটা হেনস্তাকে যৌন হয়ানির আওতায় পড়ে এবং তা ফৌজদারী অপরাধ বলে মন্তব্য করেন ও তাকে প্রয়োজনীয় আইনগত সুবিধা দিতে প্রস্তুত বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৯ মে)  প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও হেনস্তাকারী কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করে ৫টি মানবাধিকার সংগঠন। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতি, নারীপক্ষ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাষ্ট ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে। তারা জানতে চান রোজিনা ইসলাম কি তথ্য-প্রমাণাদি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন, সাক্ষীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন অথবা বিচারের মুখোমুখি না হয়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন কিনা যে তাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠানো হল।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, যৌন হয়রানির অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হতে পারে কিনা। উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, নারী নির্যাতন দমন আইনে নয়, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে পেনাল কোড অনুয়ায়ী মামলা করলে তা বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। আজকের সভায় উপস্থিত সংগঠনগুলো সব বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা কোন বিষয়ে আর কীভাবে মামলা করতে পারেন। মামলা করলে সে সম্পর্কে পরে জানানো হবে।

সংগঠনগুলো প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একটি কক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ণ এবং গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলেন নারী ও পুরুষ মিলে রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে যেভাবে হেনস্থা করেছে, তা যৌন হয়রানির আওতায় পড়ে এবং তা স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধ। প্রয়োজনে যেকোন আইনী সুবিধা দেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন বলেও জানান।

তারা বলেছেন এই আটকে রাখার ঘটনা দেশের সংবিধান পরিপন্থী। একজন সাংবাদিককে বিশেষ করে একজন নারী সাংবাদিককে আটক রাখার ঘটনাটি নিন্দনীয়। রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে, থানা হাজতে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনাটি অমানবিক।

সংবাদ সম্মেলনে ৫ টি সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তারা জানতে চান প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বা অন্যকোন ব্যক্তিকে সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা কি আটকে রেখে হেনস্তা করতে পারেন কিনা। কোন ন্যায্য কারণ ছাড়া বাংলাদেশের কোন নাগরিককে ৫ ঘন্টা কেন, ৫ সেকেন্ডও আটকে রাখার অধিকার কারও নেই।

তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে নথি ফাঁস হলে দেশের গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হতে পারে, সেটা কিভাবে একজন প্রাইভেট সেক্রেটারির টেবিলে বিনা পাহারায় পড়ে থাকে? রোজিনা ইসলাম কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন নথি ‘চুরি’ করেছেন, তা জনগণ জানতে চায়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী, নারীপক্ষের তামান্না খান, মহিলা আইনজীবি সমিতির অ্যাডভোকেট সালমা আলী এবং ব্লাষ্ট থেকে ব্যারিষ্টার সারা হোসেন এবং ব্যরিষ্টার শারমিন আক্তার। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহীন আনাম।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন এমজেএফ এর রীণা রায় এবং প্রতিবাদ লিপিটি উপস্থাপন করেন শাহানা হুদা। অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, একজন নারী ও শিশু সন্তানের মা হিসেবে আদালত চাইলে রোজিনাকে জামিন দিতে পারত। কেউ কি রোজিনাকে এই তিনদিন ফিরিয়ে দিতে পারবে কিনা ও তার উপর যে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হল, সেটির কোন প্রতিবিধান কি পাওয়া যাবে বলেও প্রশ্ন করেন তিনি।

নারীপক্ষের তামান্না খান বলেন, স্বাধীনতার মূলমন্ত্রই ছিল গণতন্ত্র যার অন্যতম বিষয় বাক স্বাধীনতা। রোজিনার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে পা দিলাম অথচ তা নিশ্চিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, এরকম একজন সাংবাদিককে যদি এইভাবে হয়রানি করা হয়, তাহলে বাকিদের অবস্থা কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। মেয়েরা এমনিতেই এই পেশায় আসতে চায় না, এখন তো আরও আসবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, রোজিনার মুক্তির পাশাপাশি তাকে আটকে রাখা, মামলা দেওয়া ও জামিন না দেওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ তারা আগে থেকেই রোজিনাকে দোষী সাব্যাস্ত করছেন। আবার অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ১৯২৩ কেন বাতিল হবে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

ব্যারিস্টার শারমিন আহমেদ বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখনই মামলা হতে পারে।’

নীনা গোস্বামী বলেন, এইভাবে হেনস্তা করার অধিকার কারও নাই। শাহীন আনাম বলেন, রোজিনা অনেক যুদ্ধ করে আজকে সাংবাদিকতার এই স্থানে এসে দাড়িঁয়েছে। অথচ আজ তাকে চুরির অপবাদ নিয়ে জেলে দেয়া হলো। তার ছোট সন্তানটির ট্রমা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। এসময় তিনি রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে সাংবাদিক সমাজের একত্রিত হওয়ার জন্য প্রশংসা করেন।

প্রতিবাদলিপিতে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী, তথ্য অধিকার আইনের বিধানাবলীর সাথে সাংঘর্ষিক হলে, তথ্য অধিকার আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে। এমনকী দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন ১৯২৩ এর ক্ষেত্রেও। কাজেই এই সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি জানানো হচ্ছে যে তথ্য অধিকার আইনের এই ধারা ও ধারা সংশ্লিষ্ট বিধানাবলী সার্বিকভাবে প্রয়োগ করা হোক, যাতে দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন ১৯২৩ এর মতো পুরনো ও জনগণের জানতে চাওয়ার অধিকারের পরিপন্থী আইন অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বক্তারা এসময় নানা ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত রোজিনাকে কেন কারাগারে নেওয়া হল বলে প্রশ্ন তোলেন। যেখানে কারাগারে কয়েদীর ভয়াবহ চাপে স্থান সঙ্কুলানের সমস্যা আছে। সেখানে রয়েছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়। দুপুর থেকে হেনস্থা করে, পুলিশ ডেকে হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে শাহবাগ থানায় পাঠানো হলো কেন এই প্রশ্নেরও জবাব চান তারা।

৫ টি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় সংবাদমাধ্যম যেমন জনগণের সেবার জন্য, তেমনি দেশের ভাল, মন্দ, দুর্নীতি, মানুষের দু:খ-দুর্দশার কথা জানিয়ে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করাও সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব। সংবাদমাধ্যমকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা রাষ্ট্রের গোপন তথ্য জনগনকে জানাতে পারে। শুধুমাত্র মুক্ত সংবাদমাধ্যমই পারে দেশে সুশাসন ও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথ প্রশস্ত করতে এবং সবধরণের প্রতারণাকে জনগনের সামনে তুলে ধরতে।

সারাবাংলা/আরএফ/

টপ নিউজ রোজিনা ইসলাম সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর