Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘স্যার ফিনিশ’— কুপিয়ে হত্যার পর সাবেক এমপিকে জানায় খুনি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ মে ২০২১ ১৯:১২

ঢাকা: আবাসন কোম্পানিকে জমি না দেওয়ায় পল্লবীর শাহিন উদ্দিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর পর সন্ত্রাসী সুমন সাবেক এমপি এম এ আউয়ালকে ফোন করে জানায়- ‘স্যার ফিনিশ’। রাজধানীর পল্লবীতে এই হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিন পর আউয়ালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের দাবি, শাহিন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক এই এমপি। হত্যার আগে তার কলাবাগানের অফিসে হামলার পরিকল্পনা হয়। সেই পরিকল্পনা বৈঠকে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে রাজধানীর পল্লবীতে শাহিন উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এক বিঘার বেশি পরিমাণ জমি কেনার চেষ্টার করছিল সাবেক এমপি আউয়ালের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘হ্যাভিলি প্রোপার্টি’। নিহত শাহিন ও তার স্বজনরা ওই জমির মালিক। কম টাকায় জমি কিনতে না পারার কারণে এই হত্যার ঘটনা ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘বেশকয়েক বছর ধরে শাহিনকে তারা টার্গেট করে আসছিল। দুমাস আগেও আউয়ালের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা শাহিনের ওপর হামলা করেছিল। ওই সময় মাথায় তার মাথায় কোপ দেওয়া হয়। এমনকি কোপানোর পরও উল্টো শাহিনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে জেলে পাঠায় আউয়াল বাহিনী। গত ঈদের কয়েকদিন আগে শাহিন ওই মামলায় জেল থেকে জামিনে বের হন। আর ঈদের দুদিন পরই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।’

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘১৬ মে দুপুরে নিজ সন্তানের সামনে শাহিন উদ্দিনকে চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা ছিল র‌্যাব তাদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। ১৯ মে চাঁদপুর থেকে হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। ২০ মে রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূলপরিকল্পনাকারী এম এ আউয়ালকে ভৈরব থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া পটুয়াখালীর বাউফল থেকে ১৯ নম্বর আসামি জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করে র‌্যাবের আরেকটি দল। তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।’

কমান্ডার মঈন জানান, এই ঘটনার চার পাঁচদিন আগে এম এ আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে মোহাম্মদ তাহের ও সুমন এই হত্যার পরিকল্পনা করে। মাঠ পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সুমন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এ সময় বেশ কয়েকজন কিলিং মিশনে জড়িত ছিল।

র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সুমন, বাবুসহ কয়েকজন একটা মিটিং করে। এরপর ঘটনার দিন তারা মীমাংসার অজুহাতে শাহিন উদ্দিনকে ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠায়। এ সময় শাহিন তার সাত বছরের শিশু সন্তান মাশরাফিকে নিয়ে সেখানে যায়। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগেই থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী সুমন, মানিক, হাসান, ইকবালসহ ১০/১২ জন শাহিনকে তার ছেলের সামনে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।’

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম ধারোলো অস্ত্র দিয়ে সুমন কোপটি দেয়। এরপর মানিকসহ বাকিরা কোপাতে থাকে। মনির হাঁটুতে এবং মানিক উপর্যুপরি শাহিনের পুরো শরীর কুপিয়ে জখম করতে থাকে। এ সময় বাবুসহ কয়েকজন বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে থাকে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে পুরো কিলিং মিশনটি শেষ করে। ঘটনা শেষে সুমনসহ বাকিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় সুমন এক নম্বর আসামি আউয়লকে মোবাইলে জানায়- স্যার ফিনিশ।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়। ১৭ মে মামলার ১৩ নম্বর আসামি দিপুকে টাঙ্গাইল থেকে র‌্যাব-৪ গ্রেফতার করে পল্লবী থানায় সোপর্দ করে। গ্রেফতার প্রধান আসামি এম এ আউয়াল একজন জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন জমি দখল, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত এবং প্রতিমাসে ১০-১২ হাজার টাকা নিতো। তাছাড়া বিভিন্ন কাজেও সে টাকা নিতো। এই সন্ত্রাসী দল রিকশার টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘দুই মাসে এই সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক মামলাও রয়েছে।’

জানা যায়, গ্রেফতার আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ভৈরবে তার একটি পীরের আস্তানা রয়েছে। সেখান থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। আউয়াল পল্লবীর আলীনগর প্রকল্প এলাকায় জমি দখল করে একটি হাউজিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একটি জায়গা দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে তিনি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের জমি দিতেই আরেকজনের জায়গা জোর করে সন্ত্রাসী দিয়ে দখলের চেষ্টা করেন তিনি। আর এরই বলি হতে হলো শাহিনকে।

এই ঘটনায় জড়িত র‌্যাব তিনজনকে গ্রেফতার করলেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অন্তত আরও পাঁচ/ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সুমন, হাসান ও মনির রয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

কুপিয়ে হত্যা খুনি পল্লবী সাবেক এমপি স্যার ফিনিশ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর