‘জেবুন্নেসার মতো আমলাদের নিয়ে আ.লীগকে টিকে থাকতে হচ্ছে’
২০ মে ২০২১ ২১:৩৮
ঢাকা: কাজী জেবুন্নেসার মতো আমলাদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে টিকে থাকতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের- আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যারা একসময় জনগণের ভিত্তি ছিল, যারা জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে, তাদের কাছে এখন জনগণ কেউ নয়। তাদের এখন কাজী জেবুন্নেসার মতো আমলা অথবা পুলিশ, র্যাব— এই ধরনের সম্প্রদায়কে নিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। এটা একদিকে যেমন লজ্জার আরেকদিকে তেমনি ভীতিরও।’
‘আজকে তারা ফ্যাসিবাদী ভীতি ছড়িয়ে সমস্ত দেশকে একেবারে অন্ধকারের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদকে আমাদের পরাজিত করতে হবে। সংগ্রাম-আন্দোলন এবং মুখোমুখি হওয়া— এটা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প পথ নেই’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানির রায় বিলম্বের ঘটনাকে ‘ওল্ড প্রাকটিস’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটাই রাষ্ট্রের বর্তমান চরিত্র। কোথায় যাবেন? জুডিশিয়ারি! আজকে রোজিনা ইসলামের জামিনের শুনানি হয়েছে। রায় দেবে রোববার। সেইম ওল্ড প্র্যাকটিস।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে ড. খন্দকার মোশাররফ আছেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাহেব আছেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আছেন, আমাদের সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ সাহেব আছেন। আমাদের সঙ্গে যে কি আচরণ করার হয় সেটা তো আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নেই না। কারণ, আমরা রাজনীতিবিদ, আমাদের প্রাপ্য— এটা হবে। কিন্তু দ্যাটস দি রিয়েলিটি। এই জিনিসটা আমাদের বুঝতে হবে এটাই রাষ্ট্রের চরিত্র। এই রাষ্ট্র যারা শাসন করছেন তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সামগ্রিক বাংলাদেশের যে চেহারা, সেই চেহারার একটা অংশ। সি ইজ নট অনলি দ্যা ভিকটিম, এখানে একের পর এক সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, গণমাধ্যমের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সাংবাদিকদের দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে।’
‘এই চিত্র শুধু সংবাদপত্রের জন্য নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর একটা চিত্র। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে, দেশে এমন একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের কোনো বক্তব্য থাকবে না, ভিন্নমত ধারণ করবার, পোষণ করবার কোনো উপায় থাকবে না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘যারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, যারা রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন তাদের কারারুদ্ধ করা হচ্ছে অথবা তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে তার একটা ফেক অডিও তারা (সরকার) এই সংবাদ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে ছেড়ে দিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে, তিনবার তাকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’
রোজিনা ইসলামের ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন আমাদের লোকজনদেরকে ধরে নিয়ে যায়, যখন রিমান্ডে দেয়, যখন মারদোর করে নির্যাতন করে, গুম করে, খুন করে তখন আমরা দেখি যে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক সংবাদমাধ্যমে সেগুলো সম্পর্কে নীরব থাকে। কেউ কেউ আবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সেটাকে ডিফেন্ড করে। আজকে কেনো এই অবস্থা?’
তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের পক্ষে সব সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন শুনলাম। এই ঐক্য কতক্ষণ টিকবে? সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর দুই পক্ষই একসাথে রাস্তায় নেমেছিলেন। ৪/৫ দিনও যায়নি। একজন উপদেষ্টা হয়ে গেছেন সরকারের, আর কয়েকজনকে হালুয়া-রুটি দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার কথাগুলো দুঃখিত আমি স্পষ্ট করে বলছি।’
ফখরুল বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হালুয়া-রুটির সন্ধানে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই ফেভারের সন্ধানে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রোজিনা ইসলামের মতো সাহসী সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পারব না— এটাই বাস্তবতা।’
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সা্বকে সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম