নিবন্ধিতরাই পাবে ফাইজারের ভ্যাকসিন, দেশে পৌঁছেছে সিরিঞ্জ
২০ মে ২০২১ ২৩:৪৯
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে এবারে যুক্ত হচ্ছে ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ‘কমিরন্যাটি’। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভি’র বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিতরণের উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় আগামী জুন মাসে আসছে এই ব্র্যান্ডের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ ভ্যাকসিন। এরই মধে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জ চলে এসেছে দেশে। এরই মধ্যে সুরক্ষা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছেন, সেসব সাধারণ মানুষকেই এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কেবল ঢাকাতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসি অ্যান্ড এইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, কোভ্যাক্স থেকে আমরা খুব শিগগিরই ফাইজার বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন পাব। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য যে সিরিঞ্জ প্রয়োজন, তা এরই মধ্যে আমাদের কাছে চলে এসেছে। এই ভ্যাকসিনও খুব শিগগিরই আমাদের কাছে চলে আসবে।
ডা. শামসুল বলেন, যারা এরই মধ্যে সুরক্ষা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন, তাদের এই এক লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ঢাকাতেই প্রাথমিকভাবে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৮ মে) স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামী ২ জুন কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ফাইজারের অন্তত এক লাখ ছয় হাজার কোভিড ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠাবে গ্যাভি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ‘দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি’। এই দেশগুলোর ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ‘কোভ্যাক্স’। বাংলাদেশ এই বৈশ্বিক উদ্যোগ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আবেদন করে গত বছরের ৯ জুলাই। ১৪ জুলাই গ্যাভি সেই আবেদন গ্রহণ করে। ১৮ সেপ্টেম্বর গ্যাভির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন পেতে পারে।
এই কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতাতেই বাংলাদেশে আসছে এক লাখ ডোজ ফাইজারের ভ্যাকসিন। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণেই সেই তারিখ পিছিয়ে গেছে।
জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার। তবে এর পরিবহন ও সংরক্ষণ অনেক জটিল ও ব্যয়বহুল। ফাইজার ভ্যাকসিনের বর্তমান সংস্করণ শূন্যের নিচে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (-৭০ ডিগ্রি) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এর ফলে বিশেষ যন্ত্রাংশ সম্বলিত ভ্যাকসিন কেন্দ্র ছাড়া এগুলো প্রয়োগ করা যায় না। তবে গত মাসে কোম্পানিটির সিইও আলবার্ট বৌরলা জানান, ভ্যাকসিনের নতুন একটি সংস্করণ আনা হচ্ছে, যা সাধারণ ফ্রিজারেও রাখা যাবে।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য গত বছরের ২ ডিসেম্বর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি দেয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে দেশটিতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। জানুয়ারিতে জরুরি ব্যবহারের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনকে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ফাইজারের দাবি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত ধাপে ভ্যাকসিনটি মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে ৯৫ শতাংশ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। আর ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ওপর এটি শতভাগ কার্যকর। সম্প্রতি কানাডায় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের ব্যবহারের জন্য ফাইজারের ভ্যাকসিনকে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডার ফেডারেল সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োজন কার্যক্রম শুরু করে। দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে গত বছরের নভেম্বরেই বেসরকারি ওষুধ নির্মাতা বেক্সিমকোকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। সিরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন উৎপাদন করছিল।
নভেম্বরের ওই চুক্তির আওতায় সিরামের কাছ থেকে তিন কোটি ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির কাছ থেকে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। এছাড়া ভারত সরকার বাংলাদেশকে ৩২ লাভ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এক কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্য বলছে, আজ বৃহস্পতিবার (২০ মে) পর্যন্ত এরই মধ্যে ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে সরকারের হাতে সাড়ে চার লাখ ডোজেরও কম ভ্যাকসিন রয়েছে। কিন্তু প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন পাওয়া ১৮ লাখেরও বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া বাকি রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বিভিন্ন দেশ থেকেই ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে চীনের সিনোফার্মা ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনও প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের ভ্যাকসিনের বাইরেও জুনের মধ্যেই আরও বেশকিছু ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে বলে আশাবাদী মন্ত্রণালয়।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
কোভিড-১৯ ফাইজারের ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়