দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ: আরও ৬ লাখ ভ্যাকসিন উপহার দেবে চীন
২১ মে ২০২১ ২০:৫৫
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) প্রতিরোধে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে দ্বিতীয় দফায় ৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন।
ঢাকায় অবস্থিত চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, চলমান করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং ই এর সঙ্গে শুক্রবার (২১ মে) টেলিফোনে আলাপ হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং ই টেলিফোনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে বলেন, উপহার হিসেবে চীন দ্বিতীয় দফায় ৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠাবে।
৯ দিন আগে চীন প্রথম দফায় ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে দিয়েছে— উল্লেখ করে চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, চলমান করোনা সংক্রমণে সারাবিশ্বে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে। বাংলাদেশ যেমন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিক তেমনি চীনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্ত এমন পরিস্থিতিতে চীন বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে চায় এবং সহযোগিতা করতে চায়। যে কারণে উপহার হিসেবে প্রথম দফায় ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠানোর ৯ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন।
উপহারের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশের করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে চীন মনে করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে চীনের করোনা ভাইরাসের টিকার নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ (stable supply) অব্যাহত রাখতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বাংলাদেশের সাথে চীনের করোনা টিকার যৌথ উৎপাদনের অনুরোধ করেন। এ সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে ঘনিষ্ট বন্ধু রাষ্ট্র উল্লেখ করে বলেন, ‘চীন বাংলাদেশে করোনার টিকার যৌথ উৎপাদনে সেদেশের কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করবে।’
ওয়াং ই জানান, চীন বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে টিকার যৌথ উৎপাদনে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে ।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক চালু করার উদ্যোগ নিবেন বলে এ সময় জানান ওয়াং ই।
উল্লেখ্য গত ২৯ এপ্রিল চীনে উদ্ভাবিত সিনোফার্মা ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
ওই প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান ওইদিন বলেছিলেন, সিনোফার্ম যে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছে, সেটার ইমার্জেন্সি ইউজের অথরাইজেশন দিয়েছি। এই ভ্যাকসিন কেনা হবে সরকারি পর্যায়ে। চীন অনুদান হিসেবে ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছে।’
এই ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হয়েছে চীনে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বিশ্বের পাঁচটি দেশের ৫৫ হাজার মানুষের ওপর হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটি এ ভ্যাকসিনের সব নথিপত্র যাচাই করেছে।
সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিনের আনুষ্ঠানিক নাম বিবিআইবিপি-সিওরভি (BBIBP-CorV)।
এ ভ্যাকসিন ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ করে নিতে হয়।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এ ভ্যাকসিন ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারীরা।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন দেশে প্রয়োগের জরুরি অনুমোদন দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এরইমধ্যে জানিয়েছে, আগামী ২৫ মে চীনের ভ্যাকসিনের ডোজ প্রয়োগ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে চার মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দরকার। চাহিদার বিপরীতে এই ভ্যাকসিনগুলোর যোগান পেলে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমাণদের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
চীনের পাশাপাশি ভ্যাকসিন সহায়তা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গেও কূটনৈতিক প্রয়াস চালাচ্ছে ঢাকা। পাশাপাশি ভারত থেকে আগাম কিনে রাখা যে ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা তা পেতেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন
চীনের ৫ লাখ ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন যারা
হংকংয়ের ৭০ ভাগ মানুষ চীনের ভ্যাকসিন চায় না
দেশে রাশিয়ার পর অনুমোদন পেল চীনের ভ্যাকসিন
চীনের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ শুরু ২৫ মে
সারাবাংলা/জেআইএল/একে