নতুন এডিপি: ৩৫৬ প্রকল্প সমাপ্তির চ্যালেঞ্জ
২১ মে ২০২১ ২২:২০
ঢাকা: চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সমাপ্ত করতেই হবে— এমন ৫৭টি প্রকল্প শেষ পর্যন্ত এই মেয়াদে শেষ হচ্ছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিসহ নানা জটিলতা ছিল এর কারণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের সেই পরিস্থিতি প্রভাব রাখতে আগামী অর্থবছরেও। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে শেষ করতে না পারা ৫৭ প্রকল্পসহ মোট ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ করার চ্যালেঞ্জ নেওয়া হচ্ছে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এই ৩৫৬ প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করার লক্ষ্য নিয়েও শেষ না করতে পারা ৫৭ প্রকল্প রয়েছে এই তালিকায়। সার্বিকভাবে ৩৫৬ প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ৩২৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ২৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে।
পরিল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, সমাপ্তযোগ্য তালিকায় যেসব প্রকল্প থাকে সেগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে এডিপি অনুমোদনের দিন এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে শতভাগ বরাদ্দ নিশ্চিত করার বিষয়টি অবহিতও করা হয়। আসছে অর্থবছরের এসব প্রকল্পের জন্যও শতভাগ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।
অর্থবছরে ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ করার চ্যালেঞ্জ উত্তরণে আশাবাদ জানিয়ে প্রদীপ রঞ্জন বলেন, কোভিড-১৯ মহামরির কারণে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। তারপরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যেন এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে মনিটরিং জোরদার করা হবে।
আগামী অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই অর্থবছরে শেষ করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৮টি প্রকল্প রয়েছে পরিবহর ও যোগাযোগ খাতের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০টি প্রকল্প রয়েছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতের, ৩৫টি করে প্রকল্প রয়েছে কৃষি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতের।
এ ছাড়া পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে ৩০টি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৫টি প্রকল্প রয়েছে। ১১টি করে প্রকল্প রয়েছে শিক্ষা এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে। ৯টি করে প্রকল্প রয়েছে স্বাস্থ্য, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা এবং ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে। আটটি করে প্রকল্প রয়েছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে। আর সাধারণ সরকারি সেবা খাতের প্রকল্প রয়েছে তিনটি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (১৮ মে) প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপিত এডিপির খসড়ায় বলা হয়েছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার জন্য ৪৪২টি প্রকল্প নির্ধারিত ছিল। গত ২ মার্চ সংশোধিত এডিপি অনুমোদনের সময় অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব প্রকল্প জুনের মধ্যেই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় তালিকাভুক্ত ৫৭টি প্রকল্প আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ৫৭টি প্রকল্পের মধ্যে আবার ১৭টি প্রকল্প ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যেই শেষ করার জন্য ওই অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আগামী অর্থবছরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রায় থাকা উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকল্প
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো ও শক্তিশালী করার প্রকল্পটি আগামী অর্থবছরে শেষ করার তালিকায় থাকছে। এই তালিকায় রয়েছে বিজি প্রেসের মুদ্রণ কার্যক্রমের আধুনিকায়নের জন্য বাই-কালার সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় পারফেক্টিং মুদ্রণ যন্ত্র, সর্বধুনিক সিটিপি মেশিন, সর্বাধুনিক স্টিচিং মেশিন ও সর্বাধুনিক কাটিং মেশিন স্থাপন প্রকল্প। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এনকম ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প; বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের জলযান নির্মাণ; জেলা সদরে ও ব্যাটালিয়ান সদরের আনসার ও ভিডিপির ব্যারাকগুলোর ভৌত সুবিধা সম্প্রসারণ করা; রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ; ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ; কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার পুনঃনির্মাণের প্রকল্পও সামনের বছরের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এই তালিকায় আরও রয়েছে ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন; ১৬টি আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিস নির্মাণ; চারটি বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন; অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ; সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি বাফার গুদাম নির্মাণ; বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলায় ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প; রংপুর অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প; ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন এবং ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প।
সমাপ্তির তালিকায় আরও আছে বরিশাল জেলার সাতলা-বাগদা প্রকল্পের পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প এবং ঘোড়াশাল চতুর্থ ইফনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প। এছাড়া ঘোড়াশাল তৃতীয় রিপেয়ারিং প্রজেক্ট, মহেশখালী পাওয়ার হাবের ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, পায়রাতে ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংযোগ সড়ক ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্টা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ ও সুরক্ষা এবং ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রকল্প, সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম, ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি করার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ দেওয়া, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওর্য়াক সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের প্রকল্পও রয়েছে তালিকায়।
সড়ক পরিবহন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে— ভালুকা-গফরগাঁও-হোসেনপুর সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার জেলা মহাসড়ক-বাসাইল জেলা মহাসড়ক এবং পাকুললা-দেলদুয়ার-এলাসিন জেলা দেলদুয়ার-এলাসিন অংশকে যথাযথ মানে ও প্রশস্তায় উন্নীতকরণ; ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টার সেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চারলেনে উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা; গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর জায়গায় ৯টি আরসিসি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ; সোনাহাট সেতু অ্যাপ্রোচ থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতি সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান সেতুগুলো পুনর্বাসন; এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প। এছাড়াও দক্ষ চালক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিআরটিসির তিনটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করার প্রকল্পও রয়েছে এই তালিকায়।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর