করোনার ধাক্কা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্পে
২২ মে ২০২১ ০৮:৪৪
ঢাকা: কোভিড-১৯ এর ধাক্কা লেগেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই উন্নয়ন প্রকল্পে। ফলে বিরাজ করছে ধীর গতি। কাঙ্ক্ষিত সুফল প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যয় হয়েছে ১১৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গড় আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রকল্প দুটি হলো ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেসমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)’ এবং ‘ইনভেসমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফিনান্সিং ফ্যাসিলিটি-২ (আইপিএফএফ-২)’ প্রকল্প।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অর্থ বিভাগের আওতায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলোর অনুকুলে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৬২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৯৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপি বরাদ্দের ৩১ শতাংশ। একই সময়ে জাতীয় অগ্রগতির হার দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে জাতীয় অগ্রগতি হারের চেয়ে অর্থ বিভাগের অগ্রগতির হার ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্পে করোনার ধাক্কা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। যে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে অবশ্য্ই চলমান করোনা মহামারির ধাক্কা লেগেছে। তবে এর মধ্যদিয়েও প্রকল্পের বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। কেননা কোনো প্রকল্পই কাজ যেন বন্ধ না থাকে সে জন্য খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে,‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেসমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুকুলে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩০৪ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে ১১৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হবে প্রায় ৩৬ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময়ে অগ্রগতি ছিল ৭২ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের লক্ষ্য ছিল গত অর্থবছরের চেয়ে এ অর্থবছর আরও বেশি আর্থিক অগ্রগতি অর্জনের। কিন্তু গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ আগামী জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হতে পারে প্রায় ৭২ শতাংশ।
এ ছাড়া ‘ইনভেসমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফিনান্সিং ফ্যাসিলিটি-২ (আইপিএফএফ-২)’ প্রকল্পটির অনুকুলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৭০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। খরচ হওয়া অর্থের মধ্যে সরকাকরি তহবিল থেকে ১৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫৮ লাখ ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ জানতে চান। এর উত্তরে উপ-প্রকল্প পরিচালক জানান, পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) অর্থরিটির জন্য বরাদ্দ করা ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কোনো টাকাই খরচ করা যায়নি। এ ছাড়া কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্ল্যানের অধীন কোনো কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এ জন্যই মূলত প্রকল্পটির অগ্রগতি কম হয়েছে।
সভার সভাপতি প্রকল্পের অনলেন্ডিং কম্পোনেন্টের অগ্রগতি জানতে চাইলে উপ-প্রকল্প পরিচালক জানান,গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ‘কর্নফুলী ড্রাইডক লিমিটেড’ শীর্ষক সাব-প্রজেক্টে ৯ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলার বা ৮৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টেকনাফে নির্মিত ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার টেকনাফ সোলার টেক এনার্জি লিমিটেড এর সোলার পাওয়ার প্লান্ট সাব-প্রজেক্টে ১৭ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলার বা ১৫১ কোটি ১৩ লাখ টাকা বিতরণের অপেক্ষায় আছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় নির্মাণাধীন র-টেক সাব প্রজেক্টে ২ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার বা ১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং দেশ ব্যাপী ফাইবার অবটিক ক্যাবল স্থাপনের লক্ষ্যে এনটিটিএনইনফ্রাস্ট্রাকচার এক্সপানসন প্রজেক্ট অব সুমিত কমিউনিকেশনস লিমিটেড সাব-প্রজেক্টে ৩৮ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩২৫ কোটি টাকার ঋণ আবেদন বিশ্বব্যাংকের অনাপত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
উপ-প্রকল্প পরিচালক আরও উল্লেখ করেন,গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক ও ইআরডির সঙ্গে প্রকল্পের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইপিএফএফ-২ প্রকল্পকে ধীর গতির প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ ওই সময় পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার বৈদেশিক সহায়তার বিপরীতে বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে মাত্র সাড়ে ১১ কোটি ডলার। ফলে প্রকল্পটি মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/জেজে/একে