Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেটে কালো টাকা বৈধ করা দুর্নীতিসহায়ক-অসাংবিধানিক: টিআইবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২১ ২৩:৩০

ঢাকা: চলতি অর্থবছর অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ সরকার ঢালাওভাবে দিয়েছে সেটি অনির্দিষ্ট মেয়াদে বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শনিবার (২২ মে) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। এসময় আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২ অর্থবছর) কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, দীর্ঘমেয়াদে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি তৈরি করবে। এটি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করার মাধ্যমে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার যেকোনো চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

‘দেশের অর্থনীতিতে যতোদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততোদিন তা ঘোষণার সুযোগ থাকবে’, বলে অর্থমন্ত্রীর যে বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চলতি বাজেটে অর্থের উৎস নিয়ে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন করার বিধান উঠিয়ে দিয়ে বৈধ উপায়ে অর্জিত ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকার মধ্যকার ফারাক একাকার করে দেওয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ অনির্দিষ্ট মেয়াদে রাখার পরিকল্পনা দেশের কর ব্যবস্থায় ন্যায় ও ন্যায্যতার প্রশ্নকে প্রকট করে তুলবে।দুর্নীতিবাজদের জন্য করোনাকালীন সময়ে নতুন প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই এমন অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে আসবে সেটিই প্রত্যাশিত।”

মাত্র ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সৎ করদাতারা কেন সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কর দেবেন? এমন প্রশ্ন রেখে ড. জামান বলেন, ‘সাময়িকভাবে এমন সুযোগ থেকে সরকার কিছুটা রাজস্ব পেলেও ধীরে ধীরে তা বড় সংখ্যক করদাতাদের খেলাপি হতে উৎসাহিত করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেবে এবং কর খেলাপির নতুন এক সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে।’

‘চলতি অর্থবছরের প্রথম নয়মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ হওয়ার খবরে নীতনির্ধারক মহলে যে সন্তুষ্টির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেটি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতি একরকম উপহাসই বলা চলে। কেননা অতিমারির মাঝেও বিপুল অর্থ সাদা করার প্রবণতাই বলে দেয়, দেশে একটি দুর্নীতিসহায়ক ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে এবং সেটি যে কোনো পরিস্থিতিকেই নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে প্রস্তুত দুর্নীতিগ্রস্তরা’, বলেন তিনি।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার দীর্ঘদিনের অসাংবিধানিক চর্চা বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বৈধ পথে অর্থ উপার্জনকারী করদাতা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে ঢালাও এ সুযোগের বিরোধিতা করলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি বরং সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।’ এক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি, সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি সরকার আনুগত্য দেখিয়ে আসন্ন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করবে এমনটাই আশা টিআইবির।

সারাবাংলা/জিএস/এমও

অসাংবিধানিক বাজেট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর