Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলতি সপ্তাহেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২১ ০০:৫৩

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে এমনটা বলা যাবে না। সংক্রমণ শনাক্তের হার এপ্রিলের তুলনায় কমে এলেও এটি বাড়বে না এমনটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ১৪ মে ঈদুল ফিতর ঘিরে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে বেড়েছিল জনচলাচল। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া বিধিনিষেধের কারণে দূরপাল্লার গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও নানাভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ঈদে প্রায় এক কোটি মানুষ এবার ঢাকা ছেড়েছে বলে তথ্য জানানো হয়েছে বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সূত্র দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঈদ পরবর্তী সময়ে ফিরে আসা বিলম্বিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সব উপেক্ষা করেই মানুষ ফিরে আসছে। আর এমন অবস্থায় বর্তমানে সংক্রমণ শনাক্তের হার কম হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদ পরবর্তী সময়ের সংক্রমণ শনাক্তের হারের আসল চিত্র পাওয়া যাবে ১৪ মে’র দুই সপ্তাহ পরে। অর্থাৎ ২৮ মে থেকে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি, পিকনিক স্পটসহ কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ রাখার পক্ষেও মত তাদের।

বিজ্ঞাপন

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময় দেশে সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ কমলেও সেটি কমছে মূলত নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে। যে কারণে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার প্রায় একই রয়ে গেছে। আর তাই এই সংক্রমণ শনাক্তের হার কম যাওয়া বিশেষ কোনো বার্তা বহন করে না। ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষেও দেখা যায় সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি। ঈদুল আজহার বন্ধের পরে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও চলতি বছরের ১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির তিনদিনের বন্ধে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ বাড়ার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি হয় বলেও ধারণা করা হয়। একইসঙ্গে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ থেকেই দেশে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির কারণে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবারের সংক্রমণ শনাক্তের হার।

ঈদ ও অন্যান্য সরকারি ছুটির পরে সংক্রমণ পরিস্থিতি

দেশে ২০২০ সালের ঈদুল ফিতর পালিত হয় ২৫ মে। এর আগে ১০ দিন অর্থাৎ ১৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ১০ দিনে দেশে ৯১ হাজার ৬৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে ১৪ হাজার ৭৪৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই ১০ দিনে দেশে ১৯৭ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। দেশে এই ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে মৃত্যুর হার ছিল এক দশমিক ৩৪ শতাংশ।

ঈদ পরবর্তী ১০ দিন সময়ে অর্থাৎ ২৬ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত দেশে এক লাখ ৫ হাজার ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২১ হাজার ৯৭৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ২৮০ জন। দেশে এই ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। একই সঙ্গে মৃত্যুর হার ছিল ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

ঈদ পরবর্তী ১১ থেকে ২০ দিন সময়সীমায় অর্থাৎ ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দেশে এক লাখ ৪৬ হাজার ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২৯ হাজার ৯৫৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং মৃত্যু হয় ৩৯০ জনের। দেশে এই ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। একই সঙ্গে মৃত্যুর হার ছিল ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০২০ সালের দেশে ঈদের আগের ১০ দিনের চেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা যায় ২৬ মে থেকে ৪ জুন। ঈদের দুই সপ্তাহ পরেও সংক্রমণ শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।

দেশে ২০২০ সালের ঈদুল আজহা পালিত হয় ১ আগস্ট। এর আগে ১০ দিন অর্থাৎ ২২ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনে দেশে এক লাখ ২২ হাজার ২৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে ২৭ হাজার ১৫১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই ১০ দিনে দেশে ৪০২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। দেশে এই ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ২১ শতাংশ। একই সঙ্গে মৃত্যুর হার ছিল এক দশমিক ৪৮ শতাংশ।

ঈদ পরবর্তী ১০ দিন সময়ে অর্থাৎ ২ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে এক লাখ ২ হাজার ৩৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২৩ হাজার ৬৪৩ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ৩৩৯ জন। দেশে এই ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ঈদ পরবর্তী ১১ থেকে ২০ দিন সময়সীমায় অর্থাৎ ১২ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে এক লাখ ৩২ হাজার ৫১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২৬ হাজার ৮৫৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ও মৃত্যু হয় ৩৯০ জনের। দেশে এই ১০ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই সঙ্গে মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অর্থাৎ ২০২০ সালে দেশে ঈদুল আজহা পালনের আগের ১০ দিনের চেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা যায় ২ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট। তবে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঢেউ নিম্নমুখী থাকায় ঈদের দুই সপ্তাহ পরে শনাক্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী থাকে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রথম ঢেউ শেষ হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি ও তার আগের দুই দিন ছিল শুক্র ও শনিবার। তিন দিনের সরকারি ছুটিতে দেশের অনেকেই বিভিন্ন পিকনিক স্পটসহ নানান স্থানে ভ্রমণ করে। যার প্রভাব দেখা যায় ২১ ফেব্রুয়ারির পরেই।

দেশে ৯ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনের এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার ৮৯০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সময়ে দেশে ১০৮ জন মারা যায়। দেশে এই দশদিনে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪ হাজার ৫৭৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সময়ে দেশে ৭৯ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যান। এ সময় দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

৪ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেখা যায়, দেশে এক লাখ ৫৯ হাজার ৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮ হাজার ৩০৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ সময় দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় ৯৯ জন। এই ১০ দিনে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই সময়েই মূলত দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে, যা দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ হিসেবেই জানান বিশেষজ্ঞরা।

দেশে এপ্রিল মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পূর্বের সব পরিসংখ্যান। ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে।

এমন অবস্থায় ঈদের আগের ১০ দিন অর্থাৎ ৪ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সময়ে দেশে ১ লাখ ৭২ হাজার ২৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে এই সময়ে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই সময়ে দেশে ৪৩২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। এই সময়ে মৃত্যুর হার ছিল ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

ঈদের পরবর্তী ৮ দিনে দেশে ১ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮ হাজার ১৯১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এই সময়ে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই সময়ে দেশে ২৪৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। এই ৮ দিনে দেশে মৃত্যুর হার হয়েছে ৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করা হয় তবে দেখা যাবে, ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের ১৪ দিন পরে কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকে। সেই সময়টাতেই কিন্তু প্রথম ওয়েভের পিক দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে সেটি কমে আসলে তার প্রভাব পড়ে ঈদুল আজহার পরবর্তী ১৪ দিনে। এই সময়েও কিন্তু একবারে যে কমে গেছে তা বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ ঈদুল ফিতরের পরবর্তী ১৪ দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। মূলত সেই সময়টাতেই কিন্তু দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি নিম্নমুখী হতে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্বে ২০২১ সালের শুরু থেকেই নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে পাওয়া যায় ফেব্রুয়ারি আগেই। আর এই সময়েই দেখা যায় আমাদের দেশে একটা রিল্যাক্স ভাব। অনেকেই পিকনিকে গেছেন, আবার যায় বিয়ে-শাদীসহ নানান ধরণের রাজনৈতিক কর্মসূচিও। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা বিষয়েও উদাসীনতা চোখে পড়ে। ফলে দেশে ২১ ফেব্রুয়ারি বন্ধের ১৪ দিন পরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে। আর আমরা দেখতে পাই, আগের সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে কতটা ভয়াবহ হয়েছিল এপ্রিল মাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো কিন্তু আমাদের দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট থেকে শুরু করে সম্প্রতি আসা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ভাবা হচ্ছে। ঈদের সময়ে মানুষ রাজধানী ছেড়ে নানা স্থানে গেছে। সবাই আবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরেও আসবে। এমন পরিস্থিতিতে যদি মানুষজন এখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তবে তার প্রভাব আমরা দেখতে পাব ঈদের ১৪ থেকে ২০ দিন সময়ে।’

‘এমন পরিস্থিতি এড়াতে অবশ্যই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও নিতে হবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি’— যোগ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল।

জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ঈদের সময় নমুনা পরীক্ষা একটু কম হয় নানা কারণে। তবে ঈদে সংক্রমণ শনাক্তের হার কমে গেছে- এমনটা ভেবে রিল্যাক্স হওয়া যাবে না। আর তাই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি পালন বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের (১৪ মে) দুই সপ্তাহ পরে আসলে বোঝা যাবে সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। তবে একটা স্বস্তির বিষয় হলো এখনো কমিউনিটি সেন্টার, পিকনিক স্পটগুলো বন্ধ। এক্ষেত্রে হয়তোবা ঈদের দিন কোনো কোনো জায়গায় মানুষজন গেছে। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি বন্ধের আগে যেমন ছিল তেমনটা হয়নি। এটা ধরে রাখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বড় পরিসরে জনসমাগম হয় এমন কর্মসূচিও বন্ধ রাখা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের পরে সবাই যখন ফিরে আসবে তখন আসলে একটা চিত্র পাওয়া যাবে। আর তাই বর্তমানের পরিসংখ্যান দেখে সন্তুষ্ট হওয়া ঠিক হবে না। সামনের দিনগুলোতে মানুষকে বোঝাতে হবে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে, মাস্ক পরাতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শাসন করে সেটা সম্পূর্ণভাবে সম্ভব নাও হতে পারে। আর তাই সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।’

ডা. মোশতাক বলেন, ‘দেশে ভ্যারিয়েন্ট যাই আসুক না কেন সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে। একই সঙ্গে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে। মাস্ক না পরে যদি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কেউ দুশ্চিন্তা করে তবে লাভ কী? কেউ যদি ভাইরাসকে নিজের কাছে প্রবেশের সুযোগ না দেয় তবে ভাইরাস কী পারবে কাউকে আক্রান্ত করতে? সম্ভব না তো। আর তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ও মাস্ক পরতে হবে। একই সঙ্গে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ভ্যাকসিন একদিকে যেমন মানুষের মাঝে ঝুঁকির মাত্রা কমাবে ঠিক তেমনি এর কারণে সংক্রমিতদের হাসপাতালে যাওয়ার সংখ্যাও কমাবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনসহ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে বিগত সরকারি ছুটিগুলো আগে পড়ে যদি বিশ্লেষণ করি তবে দেখা যাবে, মানুষের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার প্রভাব কিন্তু পড়েছে সংক্রমণ শনাক্তের হারে। তবে সেটি একদিন বা এক সপ্তাহে বোঝা যাবে না। এক্ষেত্রে ঈদের অন্তত দুই সপ্তাহ পরে মন্তব্য করতে হবে আমাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়াটাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে দেশে এবার যুক্ত হয়েছে নানারকমের ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবও। তাই আমাদের সবাইকে পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শেষ মুহূর্তে দৌড়ঝাঁপ না করে সবাইকে মাস্ক পরানোর বিষয়টি বোঝাতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে জনসমাগম এড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প জনগণের জন্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের সকলের দায়িত্ব ঝড়ের অপেক্ষা না করে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পরিস্থিতি আমাদের এখানে হবে না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। একই সঙ্গে বাড়াতে হবে নমুনা পরীক্ষাও। আর তাই সার্বিকভাবে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন।’

এদিকে ঈদের পরে সরকার আরও এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ বাড়ালেও দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি মনে করছে ঈদ পূর্ববর্তী যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। আর তাই ঈদের পরে একইভাবে মানুষ ফিরে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। সেই সঙ্গে ঈদের পরে কলকারখানা পর্যায়ক্রমে খোলার পরামর্শও দেয় কমিটি। এছাড়াও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে কমিটি।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

আশঙ্কা ঈদ করোনা চলতি সপ্তাহ বিশেষজ্ঞ সংক্রমণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর