Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত মানে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২১ ১৭:১৩

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে। এটা বাংলাদেশের জন্য, এদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। সে কারণে এখন আমাদের উপর দায়িত্ব পড়েছে, সারাবিশ্বেই কীভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা নেওয়া, মনিটরিং ও বাস্তবায়ন করা। তাই এ ব্যাপারে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

রোববার (২৩ মে) মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও পাঁচটি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে যুক্ত হয়ে এই স্থাপনাগুলো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উদ্যোগ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ার শুধু না, সারাবিশ্বের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই স্বাধীন বাংলাশেকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের যেই সক্ষমতা, সেই সক্ষমতা আজকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সেই কারণে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টারের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কারণ আপনারা দেখেছেন বিশ্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের এত মারাত্মক ঝুঁকি থাকার পরও ছোট্ট ভৌগোলিক সীমারেখায় বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়েও এবং প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছি। সে কারণে এখন আমাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে, সারাবিশ্বেই কীভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা নেওয়া, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং করা।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা রিফিউজি ছিলাম। আমরা জানি, রিফিউজি হিসেবে থাকার কষ্ট। সেজন্য মিয়ানমারের রিফিউজিদের আমরা শুধু আশ্রয়ই দেইনি, তাদের উন্নত বাসস্থানের ব্যবস্থাও করেছি। তারা যেন ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।’

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার কাছ থেকেই শিখেছি। কাজেই তার দেখানো পথেই আমরা এগিয়ে যাব। এমনকি সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত ও সুন্দর জীবনযাপন করবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা এখন করোনাভাইরাসের মতো এমন এক দুর্যোগ মোকাবিলা করছি, যা পুরো বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। এই করোনাভাইরাস জীবনযাত্রাকে ব্যহত করছে। কত আপনজনকে হারাতে হয়েছে।’ তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আপনি নিজে শুধু সুরক্ষিত থাকছেন না, আপনার আশেপাশের লোকজনদেরও সুরক্ষিত রাখছেন; এই কথাটা মনে রেখে আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলেছি। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সম্মান নিয়ে চলবে। বাঙালি জাতি সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, পুষ্টি নিরাপত্তাও করে যাচ্ছি। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের আছে। দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা আলো দিচ্ছি এবং শুধুমাত্র বিদ্যুতের আলো না, শিক্ষার আলোও। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে মানুষের জীবনে যে মৌলিক চাহিদা আমাদের সংবিধানে আছে সেটাও আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নিজের কাজ নিজে করতে হবে। কর্মক্ষম হয়ে থাকলে হবে না। যুব সমাজকে আমি বলব, নিজেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছি। ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেভাবেই আমরা আমাদের দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।’

আসন্ন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। সেটা কেবল তৈরি হচ্ছে? কতদূর যাবে, আধুনিক প্রযুক্তির কারণে জানতে পারি। আর সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা ইতোমধ্যে নিতে শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা সতর্ক থাকব। এই ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব।’

যেকোনো দুর্যোগে মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী তিনটি উপজেলায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গাইবান্ধায় মতবিনিময়ে উপকারভোগীর বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক খুশি হলাম আপনার সাথে কথা বলে। একসময় তো এখানে মঙ্গা লেগেই থাকতো। এখন তো মঙ্গা ভুলে গেছেন, তাই না? এখন তো আর মঙ্গা হয় না? গাইবান্ধা আর মঙ্গা। অথচ এক সময় সবসময় মঙ্গা লেগেই থাকত, আমি জানি। বহুবার আমরা সেখানে গেছি। ত্রাণের কাজেও গেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ওই এলাকায় সবসময় নদী ভাঙন ও বন্যা লেগেই থাকে। আস্তে আস্তে আমরা সেই সমস্যাগুলোও সমাধান করার চেষ্টা করছি। সবদিক থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে দিচ্ছি। যা তৈরি করে দিচ্ছি সেগুলোর যেন যত্ম নেয়া হয়।’

বরিশাল উজিরপুরের একজন উপকারভোগী প্রতিবন্ধীর কথার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুবই খুশি হলাম এবং খুবই উৎসাহিত। মনের জোরটা হচ্ছে সব থেকে বড় জিনিস। কোনো কিছুকে ভয় না পাওয়া। মনের জোরে এগিয়ে যাওয়া। আর আমি তো ব্যবস্থা করেই রেখেছি। তাছাড়া লেখাপড়া শিখে শুধু কাজ নয়। যেমন- কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে লোন নেওয়া যায় এবং ঘরে বসে ছোটখাট ব্যবসা করা যেতে পারে, দোকানপাট করা যেতে পারে, অনেক কাজ করার কিন্তু সুযোগ আছে। সেখানে শুধু শারীরিক শক্তি লাগবে সেটা না। বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করা যেতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহার করা, সবরকম কাজের ব্যবস্থা কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।’

বরিশাল বিভাগের ওই অঞ্চলটা তো একসময় অবহেলিত ছিল। এখন তো সেখানে সবথেকে বেশি কাজ হচ্ছেল। যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নতি করে দেয়া হচ্ছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে একেবারে সোজা পায়রা বন্দর পর্যন্ত নদী পার হয়ে যাতে রেললাইন হয় আমরা কিন্তু সেটার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর রাস্তাঘাট তো প্রচুর। বরিশালের মানুষ রেললাইন দেখেনি। আমরা তাদের রেললাইনও দেখাব- সে ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।’

সবাইকে বৃক্ষরোপণ করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৃক্ষরোপণ করা মানে প্রকৃতি এবং পরিবেশ রক্ষা করে। সেদিকে সবাই একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করে আমাদের সবুজ বাংলাদেশ যেন সবুজেই থাকে- সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

টপ নিউজ দুর্যোগ মোকাবিলা দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর