স্বাস্থ্য খাতের বৈষম্য কমাতে কাজ করছে সরকার: পরিকল্পনামন্ত্রী
২৪ মে ২০২১ ০০:৪৪
ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে যে একটা কালো মেঘ আছে- এটা বলতে দ্বিধা নেই। ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে জনমনে একটা ভীতি ও শঙ্কা বিরাজ করছে। চীন ও রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চলছে। আমাদের দেশে সব বড় বড় হাসপাতাল শহরে অবস্থিত। চিকিৎসকেরাও শহরে অবস্থান করছেন। গ্রামের মানুষ চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পান না। অথচ হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। সব হাসপাতাল হওয়ার কথা গ্রামে। তবে স্বাস্থ্যের এই অসমতার জায়গায় সমতা ফেরাতে সরকার কাজ করছে সরকার।
রোববার (২৪ মে) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশনস ২০২১: কোভিড-১৯: লিংকিং ইকোনোমিক অ্যান্ড হেলথ কনসার্নস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিআইডিএস এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয় উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, গেস্ট অব অনার ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা কতটা ভঙ্গুর সেটি উঠে এসেছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য, খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ও মূলধন পরিস্থিতি ও সুশাসনের বিষয়ে এখনই কঠোরভাবে নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির পরিবর্তে এখন জনস্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা জারি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘লকডাইন একটি চরম ব্যবস্থা। কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব কারণ ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিথিল করা হচ্ছে। এটি বৈপরীত্য তৈরি করছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যখাত কতটুকু ভঙ্গুর তা দেখিয়ে দিয়েছে।’ শিক্ষা খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনায় শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ক্রম বা রোটেশন করে কিংবা গ্রুপ করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষা সবচেয়ে কম। যদি পরীক্ষার হার বাড়ানো হতো, তাহলে সংক্রমণের মাত্রা জানা যেত।’
ড.বিনায়ক সেন বলেন, ‘জীবন ও জীবিকা ভারসাম্য আনতে কর্মসূচিগুলোর মধ্যে পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে কি না? হার্ড লকডাইন বা শক্তিশালী পদেক্ষপ নিতে গেলে ইউকে মডেলের কার্যকারিতা বাংলাদেশে প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে কি না? আগামী ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে, সেই ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে পারব কি না? প্রবৃদ্ধিভিত্তিক জিডিপি পুনর্মূল্যায়ন করে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না- এসব বিষয় ভাবতে হবে।’
ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক ও গ্রামীণ মানুষ দ্রুত প্রণোদনার অর্থ পাবে- সেটি খুব কঠিন। ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানে ক্ষমতা হ্রাস না করে এখানে সরকারের একটু সহায়ক ভূমিকা নিয়ে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো যেতে পারে। এ সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আবার অনেকের জন্য ইন্টারনেট খরচ বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।’
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। স্বাস্থ্য কিংবা একক কোনো বিভাগের মাধ্যমে যেটি সম্ভব নয়। তবে মহামারির এই সময়ে ইনফোডেমিক দেশের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। ভুল তথ্যের মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।’ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনা পূর্বাবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কোনো দেশই প্রস্তুত ছিল না।’ একটি ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবধরনের সুযোগ কাজে লাগানো হয়েছে। ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারলে টেকসই ব্যবস্থাপনা হবে। আমরা ভ্যাকসিনের মধ্যবর্তী গ্যাপ ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছি।’
আনীর চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ জীবনের চেয়ে জীবিকার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সামাজিক দুরত্ব ও মাস্ক পরা হলে সেটি লকডাউন থেকে বেশি কার্যকর হবে।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে অনেক দিক বিবেচনা করতে হয়। শ্রেণিকক্ষ ছোট। তখন করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ঠিক হবে না।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম