আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত হাবীবুল্লাহ সিরাজী
২৫ মে ২০২১ ১৬:০৫
ঢাকা: রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে। এর আগে তার কর্মস্থলে সহকর্মীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ শেষ বিদায় জানায় তাকে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে সমাহিত করা হয়। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৪ মে) রাত ১১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের হিমাগার থেকে কবির কর্মস্থল বাংলা একাডেমিতে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। সেখানে সবার শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিচালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. হাসান কবীর।
সকাল ১০টায় শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে রাখা হয় হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ। একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম লোকমানের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল দিয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় প্রয়াত হাবীবুল্লাহ সিরাজীর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং সচিব মো. বদরুল আরেফীনের নেতৃত্বে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় তাকে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনও হাবিবুল্লাহ সিরাজীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসীম কুমার উকিল, আফজাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সায়েম খান, হুমায়ুন কবীর ঢালীর নেতৃত্বে একটি দল উপস্থিত ছিল।
প্রথিতযশা এই কবি ও লেখককে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাইটার্স ক্লাব বাংলাদেশ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা শ্রদ্ধা জানান তাকে।
পাকস্থলীর সমস্যার কারণে গত ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরদিন ২৭ এপ্রিল রাত ৮টায় অস্ত্রোপচার করে তার শরীর থেকে একটি টিউমার অপসারণ করা হয়। এরপর থেকেই তিনি আইসিউতে ছিলেন। সোমবার রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবিতা ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীলতাকে তুলে ধরেছেন যা পাঠকমহলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী দেশের একজন অগ্রগণ্য কবি। ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুরে তার জন্ম। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক পাস করেন তিনি।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৩২। এছাড়া উপন্যাস, শিশুতোষ গ্রন্থ, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা মিলিয়ে অর্ধ শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে— দাও বৃক্ষ দাও দিন, মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি, মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাশ, নোনা জলে বুনো সংসার, সিংহদরজা, বেদনার চল্লিশ আঙুল, কতো কাছে জলছত্র, কতোদূর চেরাপুঞ্জি, সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না, বিপ্লব বসত করে ঘরে, কাদামাখা পা, যমজ প্রণালী।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
সারাবাংলা/টিআর