আজহারকে একা পাঠিয়েছি, শেষ করে দাও— ইমামকে আসমা
২৬ মে ২০২১ ১৯:৫৬
ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদ। ওই মসজিদের সেফটিক ট্যাংক থেকে আজহার (৪০) নামের এক পোশাককর্মীর মৃতদেহের সাতটি টুকরা উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে শুরুতেই ওই মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানকে (৫৮) গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরবর্তী সময়ে আজহারের স্ত্রী আসমা বেগমকে (২৩) গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক কাহিনী।
এই হত্যাকাণ্ডে ইমাম আব্দুর রহমান ও আসমা বেগম জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডের দিন ইমামকে ফোন করে আসমা জানায়, ‘আজহারকে তোমার কাছে একা পাঠিয়েছি, এবার শেষ করে দাও তাকে।’ ইমামও আগে থেকেই তার শয়ন কক্ষে একটি পশু জবাইয়ের ছুরি ও একটি রামদা এনে লুকিয়ে রাখে। আজহার মসজিদে আসার পর রাত ১০টার দিকে সেই ছুরি দিয়ে প্রথমে তাকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে রামদা দিয়ে মৃতদেহ সাত টুকরো করে। এর পর সেগুলো বস্তায় ভরে সেফটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে রাখে। কিছুদিন পর দুর্গন্ধ বের হলে তা গুম করার জন্য আব্দুর রহমান সেফটিক ট্যাংকের ঢাকনার ওপর মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য রাখা সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে ঢেকে রাখে।
বুধবার (২৬ মে) র্যাব সদর দফতরে মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এভাবেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আসামিদের স্বীকারোক্তির কথা বলছিলেন। এর আগে গত ২৫ মে আসমাকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসমা হত্যার পুরো পরিকল্পনার বর্ণনা দেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আসমার সঙ্গে ইমাম আব্দুর রহমানের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে কাটা হয়ে দাঁড়ায় আসমার স্বামী আজহার। দুজনের পথের কাটা সরাতেই আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এবং শেষে তাকে হত্যা করে।’
র্যাব জানায়, আসমা মূলত পরকীয়ায় আসক্ত এক নারী। আজাহার ছাড়াও আগে দুই বিয়ে হয়েছিল। আসমার দ্বিতীয় স্বামী ছিল আজাহারের বড় ভাই। কিন্তু দেবর আজাহারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে আসমা। এরপর স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আজাহারকে বিয়ে করে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে আজাহারের সঙ্গে সংসার করছিলেন আসমা। আরিয়ান নামে তাদের চার বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু আসমার পরকীয়ার আসক্তি কাটেনি। সে জানুয়ারির প্রথম দিকে মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ায়। এক পর্যায়ে ইমামকে স্বামী হিসেবে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। মার্চের শুরুতে আজাহার তাদের সম্পর্ক বুঝতে পেরে ইমামকে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করে। এমনকি ওই বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নেয় আজহার। ভেবেছিল, ইমাম সে জায়গার খবর জানবে না। কিন্তু আসমা আবারও নতুন বাসার খবর জানায় ইমামকে।
আরও পড়ুন: সেপটিক ট্যাংকে ৭ টুকরো লাশ: নিহতের স্ত্রীসহ ২ জন রিমান্ডে
র্যাব আরও জানায়, মার্চের মাঝামাঝি সময়ে এসে আসমার সাথে ইমামের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। এক ছাত্রের নামে কেনা সিম কার্ড দিয়ে ফোনে তাদের গোপন যোগাযোগ হতো। এক পর্যায়ে রোজার শুরুর এক সপ্তাহ আগে আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। রোজার মধ্যেই তাকে হত্যার কথা থাকলেও আজহারের কলেরা হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপর নতুন করে পরিকল্পনা শুরু হয় হত্যার। ঈদুল ফিতরের সাত দিন আগে পরিকল্পনা হয় যে, আজাহার সুস্থ হলে এবার তাকে শেষ করে দিতে হবে। ঈদ শেষে আসমা আজাহারকে নিয়ে টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখান থেকে আজাহারকে অনেকটা জোর করেই ইমামের কাছে পাঠায়। আসমা বলে, ‘ইমামের কাছে গেলে তোমাকে কিছু টাকা দেবে, সেই টাকা দিয়ে তুমি ভালো ডাক্তার দেখাতে পারবে।’ স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে আজাহার গত ১৯ মে ইমামের কাছে ওই মসজিদে যায়।
আজাহার যখন মসজিদে উপস্থিত হয় তখন এশার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইমাম। ইমাম আজাহারকে দেখে বলে, এখন নামাজের সময় তুমি আমার কক্ষে বস। আজাহার রুমে যায়। অসুস্থ আর ক্লান্ত থাকায় আজাহার ইমামের বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এদিকে আসমা আগেই ইমামকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, আজাহারকে পাঠিয়েছি তোমার কাছে। এবার তাকে শেষ করে দাও। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমাম ওই রাতেই আজাহারকে জবাই করে হত্যা করে লাশের টুকরাগুলো সেফটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে।
উল্লেখ্য, ইমাম আব্দুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ইমামের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
এদিকে বুধবার (২৬ মে) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমান ও আজহারের স্ত্রী আসমার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম