খাগড়াছড়ির ৩ নদীতে নৌকার পরিবর্তে চলছে ট্রাক
২৭ মে ২০২১ ০৯:৫৫
খাগড়াছড়ি: নদীতে থাকার কথা পানি, মাছ ও জলজ প্রাণী। চলাচল করার কথা নৌকাসহ বিভিন্ন জলযানের। কিন্তু যা থাকার তা নেই, যা চলার তাও চলছে না। নৌকার পরিবর্তে নদীতে চলছে বালু তোলার ট্রাক। মাটি, বালু আর ময়লা আবর্জনায় ভরাট খাগড়াছড়ির তিন নদী। নদীগুলো খনন করে প্রকৃত চেহারায় ফিরিয়ে আনার দাবি খাগড়াছড়িবাসীর।
খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার নয় উপজেলায় চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নামের তিনটি নদী রয়েছে। ফেনী নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত নদী হিসেবেই পরিচিত। একসময় এই তিন নদীই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। চলাচল করতো বাণিজ্যিক নৌকাসহ নানা জলযান। নদীতে ছিলো নানা জলজ প্রাণী। কৃষিতে সেচের সিংহভাগ পানির যোগান দিতো এই তিন নদী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নদীগুলো মরুময়। পানি নেই বললেই চলে। নদীগুলোর সর্বত্র মাথা তুলেছে বালুচর, মাটির চর আর ময়লার ডিপো। নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার বা জলযানের পরিবর্তে চলছে বালু তোলার ট্রাক্টর। নদীর তলদেশে গজাচ্ছে ঘাস। চড়ে বেড়াচ্ছে গরু ও ছাগল। পুরো বছরে দুই মাসও থাকে না পানি। খাগড়াছড়িবাসীর দাবি নদীগুলো ড্রেজিং করে প্রকৃত চেহারায় ফিরিয়ে আনার।
জেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান মো. জাফর উল্ল্যাহ বলেন, এই নদীতে লঞ্চ ও স্টিমার পর্যন্ত চলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য নৌপথেই চলতো। জেলেরা মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। কৃষকেরা নদীর পানি দিয়ে সেচ দিতেন। পরিবারের দৈনন্দিন সকল কাজে নদীর পানি ব্যবহার হতো। এখন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসব আর দেখা যায় না। এখন নদীর বুকে বালু তোলার ট্রাক্টর চলছে। নদী খননের মাধ্যমে নদীর পুরানো চেহারা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি সদরের গঞ্জপাড়া এলাকার মো. নুরুল আলম বলেন, আগে নদী অনেক গভীর ছিল। বর্তমানে বালুতে ভরাট হওয়ায় নদীর গভীরতা কমেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি লোকালয়ে ডুকে পড়ে। নদীর পাড় ভেঙে যায়। গত ১০ বছরে তার এলাকার প্রায় ১০০ পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে স্থানান্তর হয়েছে। দুর্ভোগ লাগব করতে তিনি নদীগুলো খননের দাবি জানান।
দিঘীনালা উপজেলার কবাখালী এলাকার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মাইনী নদী ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও নৌকায় যাওয়া যায় না। গোসল ও রান্নার কাজে আগে নদীর পানি ব্যবহার করলেও এখন তা সম্ভব নয়। যে যতসামান্য পানি আছে তাও ময়লার ভাগাড়। গায়ে লাগলেই চুলকানি শুরু হয়। রান্নার কাজে লাগালে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিবিশনাল ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আফসার বলেন, খাগড়াছড়িতে নদী ভরাটের বিষয়টি সত্য। ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়নবোর্ড এই বিষয়ে কাজ করেছে। চেংগী ও মাইনী নদীর ওপর জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এই দুই নদীকে পূর্বের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে খাগড়াছড়ির দিঘীনালার পাশাপাশি রাঙামাটির নানিয়ার চর হয়ে, মহালছড়ি, দাঁতকুপিয়া, কমলছড়ি হয়ে নদী খনন, চর কাটিং, একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করার জন্য প্রায় ৬৪০ কোটি টাকার কাজ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। চলমান মহামারি করোনাসহ বাস্তবায়নে একটু সময় লাগছে। তবে অচিরেই এসব কাজ সম্পন্ন করে নদী শাসনের মাধ্যমে খাগড়াছড়িবাসীর জীবন-জীবিকাসহ সকলক্ষেত্রে পানি সমস্যার সমাধান করা হবে।
সারাবাংলা/এএম