অন্যের পরামর্শ নিয়ে আ.লীগ সরকার চলে না: প্রধানমন্ত্রী
২৭ মে ২০২১ ১৫:২৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, উন্নত হবে, মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন হবে- আমরা সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। কারণ অন্যের পরামর্শ নিয়ে আমরা তথা আওয়ামী লীগ সরকার চলে না।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মাগুরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করবে, তাদের জীবনমান উন্নত হবে, ভাগ্যের পরিবর্তন হবে- এটাই জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর জায়গা থেকে বাংলাদেশকে একেবারে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দিকে কখনও তাকায়নি। অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতাকে তারা ভোগের বস্তুতে পরিণত করেছিল। নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা করা ও দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নিয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা এবং আমরা যে বিজয়ী জাতি, সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের যে একটা মর্যাদা সেই মর্যাদাটাও ভূলুণ্ঠিত করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন থেকে আমরা প্রচেষ্টা চালাই। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো আমরা সমাপ্ত করব। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ করছি।’
যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রেলওয়েকে আলাদাভাবে মন্ত্রণালয় দেওয়ার গুরুত্বও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ বিএনপি সরকারের আমলে বিশেষ করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তারা বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক্রমে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কাজ নিয়েছিল। তাদের জন্য অনেকগুলো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকগুলো লাইন বন্ধ হয়ে যায়। আবার স্টেশনও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো রেলযোগাযোগকে প্রায় ধ্বংস করে গেছে তারা। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের অনেক অভিজ্ঞ লোককে বিদায় করে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রেলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ হয়। অল্প খরচে চলাচল করতে পারে। পণ্য পরিবহন করতে পারে। একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে, অপরদিকে মানুষের যাতায়াতও সহজ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে রেলকে গুরুত্ব দিই। কারণ অন্যের পরামর্শ নিয়ে আমরা চলি না। বাংলাদেশটা কীভাবে চলবে, উন্নত হবে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন হবে, বাংলাদেশের কীভাবে উন্নতি হবে- আমরা সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। আর সেভাবে গুরুত্ব দিয়েই আমরা সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এমনকি যেসব এলাকায় রেল নেই সেসব এলাকায় আমরা রেলসংযোগ দিয়ে দিচ্ছি।’
যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা একসময় রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, তারাই আবার উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে আরেকটা রেলসেতু করবার জন্য। অর্থাৎ যমুনা নদীর ওপর আরেকটা ডেডিকেটেড রেলসেতুরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সেটার কাজ আমরা করে যাচ্ছি। তাছাড়াা ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেনলাইন করার চিন্তা ভাবনা আছে। তবে আমাদের দেশের মাটি কতটা স্পিড লোড নিতে পারবে তার ওপর নির্ভর করে, স্টাডি করে সেটা আমরা করব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,‘পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি, সেখানে আমরা রেললাইন করছি। পদ্মাসেতু পার হয়ে ভাঙ্গা দিয়ে একদিকে যশোর হয়ে খুলনা এবং অপরদিকে সোজা বরিশাল হয়ে একেবারে পায়রা নতুন নৌবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।’
বরিশাল বিভাগে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশাল বিভাগকে এক সময় বলা হতো বাংলার ভেনিস। অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল- সেখানে রেললাইন করার চেষ্টা করে ব্রিটিশরাও পারেনি। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, স্টাডি চলছে। ব্রিটিশদের অনুরোধ করছি তারা যেন রেলটা নির্মাণ করে দেয়। সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। সমগ্র বাংলাদেশকে রেলওয়ের আওতায় নিয়ে আসছি।’
১৯৬৫ সাল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেসব রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম