Sunday 06 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তামাকে প্রতিবছর ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ মে ২০২১ ২২:২২ | আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ২৩:১৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: তামাক পণ্য বিক্রি থেকে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় করে থাকে। প্রতিবছর তামাক খাত থেকে সরকারের এই আয়ের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তামাক ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তামাকের কারণে প্রতি বছর দেশের ৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার(২৭ মে) আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২১-২২-এ তামাক কর বাড়ানোর মাধ্যমে যুব সমাজকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করা বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সংলাপে মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) ও ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন ফর রুরাল পুওর (ডরপ) যৌথভাবে এই ভার্চুয়াল সংলাপ আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রামের হেড হাসান শাহরিয়ার।

মূল প্রবন্ধে হাসান শাহরিয়ার বলেন, দেশে চার কোটি মানুষ তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে। তামাক পণ্যের ধরন ও ব্র্যান্ডভেদে ভিন্ন ভিন্ন হারে কর আরোপ করা হয়ে থাকে। আবার বাজারে ৪ থেকে ১৪ টাকায় সিগারেট পাওয়া যায়। কম দামি সিগারেটের ওপর করের পরিমাণও কম। ফলে কম দামি সিগারেটের দাম কমই থাকছে। আর মানুষও কম দামের সিগারেটের দিকে বেশি ঝুঁকছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম কম। সিগারেট দিন দিন আরও বেশি সহজলভ্য হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাড়েনি সিগারেটের দাম। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত টার্গেট পূরণ করতে হলে প্রতি বছর দেড় শতাংশ হারে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে। তার জন্য সিগারেট ও তামাক পণ্যের ওপর কর বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করছেন। ২৪ বছরের কম বয়সী ৪৯ শতাংশ তরুণ তামাক সেবন করছে। এটি ভয়াবহ চিত্র। তরুণদের তামাক থেকে দূরে না রাখতে পারলে আমাদের টার্গেট পূরণ করতে পারব না। এর জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও সার্বিক চিত্র ভয়াবহ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এত ট্যাক্স বাড়ানোর পরও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাক পণ্যের দাম অনেক কম। তাই ‍শুধু ট্যাক্স বাড়ালেই চলবে না, তামাক সেবন বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা তরুণদের সবসময় খেলাধুলায় জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করছি। উপজেলা পর্যায়ে খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। নতুন নতুন বিনোদন কেন্দ্র করে দিচ্ছি। তামাকের কর বাড়াতে সংসদে জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি ড.শামসুল আলম বলেন, তামাক বন্ধ নিয়ে বিতর্ক আছে। ছোট নেশা বাদ গেলে তারা বড় নেশা গ্রহণ করবো কি না, এটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা অনেক দেশ থেকে কিন্তু তামাকের ব্যবহার শূন্য করা যায়নি। তাই আবেগে অনেক কথা বললেও বাস্তবতাও ভাবতে হবে।

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশকে ২০৪০ সালে উন্নত দেশে রূপ দিতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। কিন্তু তরুণদের তামাকের হাত থেকে বাঁচাতে না পারলে দেশে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার টার্গেট পূরণ হবে না। তাই তামাকের ওপর কর বাড়াতে হবে।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) বাংলাদেশ লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক সূচকে আমরা অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছি। এমনকি মাথাপিছু আয় ভারতের থেকে এগিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে তামাকপণ্যের দাম কম। এটা বাড়াতে না পারলে দেশের জন্য ক্ষতি-যুব সমাজের জন্য শঙ্কা।

ডিজেএফবি সভাপতি হুমাযুন কবীর বলেন, অনেকেই বলে থাকেন, রাজস্ব আয়ের বড় খাত তামাক। কিন্তু এখানে দেখছি, এই খাত থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও চিকিৎসায় খরচ হয়ে যাচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কারণ এই তামাক। তাই তামাকে কর আরও বাড়িয়ে একে সহজলভ্য হওয়া থেকে দূরে রাখতে হবে।

ডরপ’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, তামাক সেবন থেকে তরুণদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। সিগারেটের খুচরা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী ১০ টাকায় এক শলাকা সিগারেট কিনে সেবন করে। প্যাকেট ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলে সে কিন্তু সিগারেট কিনতে পারত না। কারণ তার কাছে এক প্যাকেট সিগারেট কেনার থাকে না।

ডিজেএফবি’র কার্যনির্বাহী সদস্য সুশান্ত সিনহার সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, ডরপ-এর চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার, ডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, সহসভাপতি হামিদুজ্জামান মামুন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মামুন আব্দুল্লাহ, ডরপ-এর উপ পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসানসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

তামাক তামাকপণ্য তামাকে কর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার রাজস্ব আয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর