তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় ভারতে টিকটক হৃদয়সহ গ্রেফতার ৫
২৮ মে ২০২১ ০১:২৪
ঢাকা: তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত টিকটক হৃদয় বাবুসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ব্যাংগালুরু পুলিশ। এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়েরের পর বাংলাদেশ পুলিশের যোগাযোগ করলে ভারতের পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শিগগিরই অভিযুক্তদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, গ্রেফতার পাঁচ জনের একজন নারী।
আরও পড়ুন- পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার তরুণী বাংলাদেশি, নির্যাতক টিকটক হৃদয়
ডিসি শহীদুল্লাহ জানান, নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা ওই ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তরুণের নাম রিফাতুল ইসলাম, যিনি টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত। তিনি এবং তার সহযোগীরা ভারতে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে ব্যাংগালুরু থেকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, পৈশাচিক নির্যাতন ও গণধর্ষণের ঘটনাটির ভিওি আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভাইরাল হয়েছিল। পরে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ ঘটনাটি অনুসন্ধান শুরু করে। নির্যাতকদের খুঁজে পেতে ভিডিও থেকে নেওয়া তাদের ছবি আসাম পুলিশ টুইটারেও পোস্ট করেছিল।
দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়, একটি মোবাইল ফোনকলের সূত্র ধরে ব্যাংগালুরুতে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ব্যাংগালুরু পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামামূর্তি নগরের আভালাহালি এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
খবরে আরও বলা হয়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা শ্রমিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা হলেন— সাগর, মোহাম্মদ বাবা শেখ, হৃদয় বাবু (টিকটক হৃদয় বাবু) ও হাকিল। গ্রেফতার নারীর পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে স্থানীয় পুলিশ বলছে, মেয়েটিকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ উপায়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। সেখান থেকে মেয়েটি পালিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু এই চক্রটি তাকে আবার খুঁজে বের করেন এবং তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালান। সেটি ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও পড়ুন- পাচারের শিকার নুরজাহানের দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা
এর আগে, চার-পাঁচ জন মিলে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি সাইবার মনিটরিং টিমের নজরে এলে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরে নির্যাতক হিসেবে রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’কে শনাক্ত করে পুলিশ। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, চার মাস আগে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাকে।
পরে পুলিশ কৌশলে হৃদয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে করে জানতে পারে, তিনি মাস তিনেক আগে ভারতে গেছেন। ঘটনাটি কেরালায় ১৫-২০ দিন আগে ঘটনাটি ঘটেছে। মেয়েটিকে নির্যাতন করার সময় তার সঙ্গে ছিলেন তারই কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ঢাকায় হাতিরঝিল এলাকায় বাসা।
উপকমিশনার শহীদুল্লাহ বৃহস্পতিবার বিকেলে জানিয়েছিলেন, মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা। মেয়েটির পরিবারও মেয়েটিকে চিনতে পেরেছে। মেয়েটির বাবা হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় পুলিশ, প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন শহীদুল্লাহ।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর