অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল এই তরুণীকেও
২৮ মে ২০২১ ০৩:১৯
তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও’র সেই তরুণীকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশের তথ্য বলছে, অভিযুক্ত ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সবাই বাংলাদেশি। তারা সবাই অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে ব্যাংগালুরুর রামামূর্তি নগরের আভালাহালি এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ব্যাংগালুরুর পুলিশ প্রধান কামাল প্যান্ট নিজেও টুইট অ্যাকাউন্টে এ ঘটনা তুলে ধরেছেন।
কামাল প্যান্ট বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নির্যাতনের একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে দুই নারীসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার তরুণীকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন-
- পাচারের শিকার নুরজাহানের দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা
- পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার তরুণী বাংলাদেশি, নির্যাতক টিকটক হৃদয়
- তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় ভারতে টিকটক হৃদয়সহ গ্রেফতার ৫
নির্যাতনের শিকার তরুণীসহ অভিযুক্তরা সবাই বাংলাদেশি এবং তারা পাচারের শিকার হয়ে অবৈধভাবে ভারতে গেছেন। কামাল প্যান্ট বলেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, অভিযুক্তরা সবাই একই দলের অংশ এবং তারা সবাই বাংলাদেশি। নির্যাতনের শিকার তরুণীও বাংলাদেশি। তাকে অবৈধভাবে পাচার করে ভারতে আনা হয়েছিল এবং টাকা-পয়সা বিষয়ক কারণে হয়তো তার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
এর আগে, বৃহস্পতিবার ডিএমপির উপকমিশনার শহীদুল্লাহ জানান, নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা ওই ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তরুণের নাম রিফাতুল ইসলাম, যিনি টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত। তিনি এবং তার সহযোগীরা ভারতে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে ব্যাংগালুরু থেকে গ্রেফতার করেছে বলে জানান শহীদুল্লাহ।
টিকটক হৃদয় বাবুসহ (বাাঁয়ে) গ্রেফতার ৪ তরুণ [ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে নেওয়া ছবি]
ভারতীয় সাংবাদিক প্রতিভা রমন টুইটারে ঘটনাটিকে ভারতে ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ব্যাংগালুরুতে নির্ভয়ার মতোই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ছয় দিন আগে এনআরআই কলোনিতে ২২ বছরের এক তরুণী চার জনের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়। জানা গেছে, ঘটনার শিকার ও অভিযুক্ত সবাই বাংলাদেশি এবং পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এমন অকথ্য নির্যাতন। অভিযুক্ত সবাই গ্রেফতার।’
বাংলাদেশ থেকে অসহায় শিশু, কিশোরী ও তরুণীদের পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ভারতে পাচার নতুন কোনো ঘটনা নয়। কয়েকদিন আগেই ভারতের দ্য আউটলুকের এক প্রতিবেদনে এক তরুণীর খবর প্রকাশ পায়, যিনি পাচারচক্রের ডেরা থেকে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গে বিএসএফের হাতে আটক হন। তিনি এখন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ হেফাজতে আছেন।
এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নারী-পুরুষসহ চার-পাঁচ জনকে পাশবিক নির্যাতন করতে দেখা যায়। ভিডিওটি বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি সাইবার মনিটরিং টিমের নজরে এলে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরে নির্যাতক হিসেবে রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’কে শনাক্ত করে পুলিশ। তার বাসা মগবাজার।
পুলিশ কৌশলে হৃদয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে করে জানতে পারে, তিনি মাস তিনেক আগে ভারতে গেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কেরালায়, ১৫-২০ দিন আগে। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ঢাকায় হাতিরঝিল এলাকায় বাসা। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েটির পরিবারও তাকে চিনতে পারে। পরে মেয়েটির বাবা হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, এই ভিডিও আসাম-পশ্চিমবঙ্গেও ভাইরাল হয়। এদিকে, ২৩ মে রাজস্থানের যোধপুরে নাগাল্যান্ডের এক তরুণী আত্মহত্যা করেন। এই ভিডিও’র তরুণীই তিনি— এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্র ধরে ভিডিও থেকে নির্যাতকদের ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে আসাম পুলিশ টুইটারে পোস্ট করে। তাদের সন্ধান দিতে পারলে তার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করে। তবে শেষ পর্যন্ত যোধপুর নয়, এই ভিডিও’র সবাই বাংলাদেশি বলেই জানাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর