বিশেষায়িত ক্যামেরায় উইঘুরদের ওপর নজরদারি
২৮ মে ২০২১ ১৪:০৮
চীনের শিনজিয়াংয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্ষমতা সম্পন্ন এমন এক ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে যার মাধ্যমে উইঘুর জনগোষ্ঠীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
মূলতঃ সেখানকার পুলিশ স্টেশনগুলোতে এ ধরনের ক্যামেরা সংযোজনের কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, যিনি ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
আরও একজন মানবাধিকার কর্মী উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারি বাড়াতে ওই ধরনের ক্যামেরা সংযোজনের বিষয়টি বিবিসিকে নিশ্চিত করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে লন্ডনের চীনা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি কোনো জবাব পায়নি বিবিসি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সকল নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে চীন সরকার।
এদিকে, বিবিসির প্যানারোমা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই সফটওয়্যার ইঞ্জিয়ার বলেছেন, ল্যাবরেটরিতে যেমন বিভিন্ন গবেষণার কাজে নির্বিচারে ইঁদুর ব্যবহার করা হয়, চীন সরকার উইঘুর মুসলিমদের সেভাবে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, শিনজিয়াংয়ের পুলিশ স্টেশনগুলোতে এমনভাবে এআই সম্বলিত ক্যামেরাগুলো বসিয়েছেন যেনো তা আটক ব্যক্তি থেকে তিন মিটার দূরত্বে থাকে। ক্যামেরাগুলো কাজ করে লাই ডিটেক্টরের মতো কিন্তু এর প্রযুক্তি আরও আধুনিক।
তিনি আরও বলেন, একটি চেয়ারের সঙ্গে দুই হাত এবং পায়ের পাতা বেধে দিয়ে ওই ক্যামেরা সামনে নিয়ে আসা হয়। আটক ব্যক্তির মুখভঙ্গি যখনই বদলে যাবে তখনই সিগন্যাল পাওয়া যাবে।
এছাড়াও, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ক্যামেরাগুলো একটি পাই চার্ট তৈরি করবে। যার মাধ্যমে সবুজ এবং লাল অংশ চিহ্নিত হবে। লাল অংশে প্রকাশ হবে ওই ব্যক্তির রাগ, ক্ষোভ এবং বিরক্তি — এমনটাই জানিয়েছেন ওই ইঞ্জিনিয়ার।
তিনি বলেন, যদি কোনো প্রমাণ ছাড়া সন্দেহের বশে কাউকে আটক করা হয় তাকে আনা হবে এই ক্যামেরার সামনে তারপর আবেগ বা মানসিক অবস্থা বিচার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
চীনের শিনজিয়াংয়ে এক কোটি ২০ লাখ উইঘুর জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। যাদের অধিকাংশই মুসলিম। এই অঞ্চলে এমনিতেই ব্যাপক রাষ্ট্রীয় নজরদারির অধীনে রয়েছে। এছাড়াও, চীন সরকারের তথাকথিত লার্নিং সেন্টার, মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে যেগুলোকে হাই সিকিউরিটি ডিটেনশন ক্যাম্প বলা হচ্ছে, সেখানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমগুলো দাবি করছে।
তবে, চীন সবসময় বলে এসেছে শিনজিয়াংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দমনের উদ্দেশ্যেই সেখানে নজরদারি কঠোর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) পরিচালক সোফি রি রিচার্ডসন বলেন, শিনজিয়াংয়ে মানুষকে নিছকই কিছু ডেটায় পরিণত করা হচ্ছে। প্রযুক্তি এমন জনগোষ্ঠীর ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে, যারা এমনিতেই দমন-পীড়নের মধ্যে বসবাস করছেন।
সারাবাংলা/একেএম