পুলিশ হেফাজত থেকে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ টিকটক হৃদয়সহ ২
২৮ মে ২০২১ ১৩:৫৮
তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় ভারতে গ্রেফতার টিকটক হৃদয় বাবুসহ দুই জন পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভারতীয় পুলিশ বলছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। ওই ঘটনায় পুলিশ টিকটক হৃদয় বাবু ও এক তরুণীসহ পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ন্যাশনাল হেরাল্ড ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, শুক্রবার (২৮ মে) সকালে পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে টিকটক হৃদয় বাবু ও সাগর গুলিবিদ্ধ হয়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে টিকটক হৃদয় বাবু, সাগর, মোহাম্মদ বাবা শেখ ও হাকিল নামে চার তরুণকে গ্রেফতার করে ব্যাংগালুরু পুলিশ। গ্রেফতার নারীর পরিচয় জানানো হয়নি। ভারতীয় পুলিশ বলছে, গ্রেফতার সবাই অবৈধভাবে ভারতে গেছেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যে তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে, তাকেও এই চক্রটি অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন- তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় ভারতে টিকটক হৃদয়সহ গ্রেফতার ৫
ব্যাংগালুরু পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতারের পর শুক্রবার তদন্তের জন্য থানা থেকে গ্রেফতার চার তরুণকে তাদের আবাসস্থলে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই টিকটক হৃদয় বাবু ও সাগর পুলিশকে আক্রমণ করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করলে হৃদয় ও সাগর হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হয়। এখন তাদের একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংগালুরু পুলিশ বলছে, বনসওয়াদির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) এন এস সাকরি ও তার দল ওই চার জনকে কে. চান্নাসান্দ্রা এলাকায় নিয়ে যাওয়া গহয়। পুলিশের ধারণা, সেখানেই ওই তরুণীকে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেই পুলিশের ওপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে হৃদয় ও সাগর। এসময় রামামূর্তি নগর পুলিশের ইন্সপেক্টর মেলভিন ফ্রান্সিস তাদের ওপর গুলি চালান। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ধারণা করছে, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী কর্ণাটকে নেই। তিনি পাশের কোনো রাজ্যে চলে গেছেন। তার সন্ধানে বিশেষ একটি অভিযানিক দল মাঠে নেমেছে।
এর আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নারী-পুরুষসহ চার-পাঁচ জনকে পাশবিক নির্যাতন করতে দেখা যায়। ভিডিওটি সাইবার মনিটরিং টিমের নজরে এলে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরে নির্যাতক হিসেবে রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’কে শনাক্ত করে পুলিশ। তার বাসা মগবাজার।
আরও পড়ুন- অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল এই তরুণীকেও
পুলিশ কৌশলে হৃদয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে করে জানতে পারে, তিনি মাস তিনেক আগে ভারতে গেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে, ১৫-২০ দিন আগে। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ঢাকায় হাতিরঝিল এলাকায় বাসা। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েটির পরিবারও তাকে চিনতে পারে। পরে মেয়েটির বাবা হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, এই ভিডিও আসাম-পশ্চিমবঙ্গেও ভাইরাল হয়। এর মধ্যে ২৩ মে রাজস্থানের যোধপুরে নাগাল্যান্ডের এক তরুণী আত্মহত্যা করেন। এই ভিডিও’র তরুণীই তিনি— এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্র ধরে ভিডিও থেকে নির্যাতকদের ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে আসাম পুলিশ টুইটারে পোস্ট করে। তাদের সন্ধান দিতে পারলে তার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করে। তবে শেষ পর্যন্ত যোধপুর নয়, এই ভিডিও’র সবাই বাংলাদেশি বলেই জানাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ।
আরও পড়ুন- পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার তরুণী বাংলাদেশি, নির্যাতক টিকটক হৃদয়
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সাংবাদিকদের জানান, অবৈধভাবে ভারতে নারী পাচারের সঙ্গে এই চক্রটি জড়িত বলে ধারণা করছেন তারা। টিকটক হৃদয় ও তার সহযোগীদের ধরতে ভারতের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/টিআর