ঢাকা: আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনাদের এই ভূমিকা চিরকাল স্মরণ করবে। আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন।’
শনিবার (২৯ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি শান্তিরক্ষী মিশনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরেই জাতির পিতা একটা যুদ্ধ বিধস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সমর্থন এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদও বাংলাদেশ পেয়েছিল। তিনি শুধু বাঙালি জাতির জন্যই না। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানষের মুক্তির বার্তাবাহক, মুক্তির দূত এবং শান্তির দূত।’
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সত্যি গর্বিত, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। সেই সময়ে এই শান্তি রক্ষী দিবস জাতিসংঘের। শান্তিরক্ষা বাহিনীর এক নম্বর সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ আজকে সম্মানিত। কাজেই সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী দেশ হিসাবে আমরা গৌরবের ৩৩বছর উদযাপিত করছি।’
যারা বিশ্বশান্তি রক্ষায় যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বই করছেন এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও আপনারা উজ্জ্বল করছেন বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আপনাদের কষ্ট হয় আপনারা বিদেশে একটা বৈরি পরিবেশে থেকে বিশ্বেশান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। যেকোন জটিল অবস্থায় আমরা অনেক সময় দেখেছি যে, অনেক দেশ যেতে চায় না। যখন আমাদের কাছে বলা হয়েছে, আমি বলেছি, হ্যাঁ আমরা বাঙালিরা যেকোনো জটিল অবস্থায়, যেকোন বৈরি পরিবেশ মোকাবিলা করার মত সাহস রাখি। কাজেই আমাদের শান্তিরক্ষীরা পারবে। আমার মনে হয়, সবথেকে সংঘাতপূর্ণ জায়গা, সবথেকে জটিল জায়গাগুলিতে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন।’
বর্তমানে করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। তবুও আমরা আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে সবাইতে যাতে নিরাপদ থাকতে পারে বা এই করোনাভাইরাসের কারণে বেশি প্রাণহানি না হয় বা প্রাদুর্ভাব না ছড়ায় তার জন্যআমাদের যথাযথ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। শুধু শিক্ষার দিকে বেশ সমস্যা হচ্ছে। সেটাও যাতে দূর হয়ে যায় তার ব্যবস্থা আমরা নেবো।’
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে সামনে রেখেই আমরা আমাদের তরুণ এবং যুবশক্তিকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারণ আমাদের তরুণ সমাজ তারাও যেন এটা শেখে- শান্তি একমাত্র উন্নয়নের পথ, শান্তি নিরাপত্তার পথ। শান্তি মানুষের কল্যাণের পথ। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে এবং আগামীর যারা আসবে তারাও যেন প্রস্তুত থাকে সেইভাবেই তাদের তৈরি করতে চাই।’
আর্ন্তজাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। এটা জাতিসংঘকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই। এখন ১২২টি দেশে ৮০হাজার ১৮৪ জন শান্তি রক্ষী বাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশের ৬৭৪২ জন শান্তিরক্ষী রয়েছে। এ সংখ্যা মোট শান্তিরক্ষীর ৮.৪ শতাংশ। যা আমাদের অত্যন্ত গৌরবের।’
‘এছাড়া বর্তমানে ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্বে নিয়োজিত রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের নারী পাইলটদের নিয়ে খুব গর্ববোধ করি। কারণ আগে আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীতে নারীদের কোনো অবস্থান ছিল না। পুলিশবা হিনীতে জাতির পিতা প্রথম নারী নিয়োগ করে গিয়েছিলেন। কাজেই এখন সবজায়গায় আমাদের মেয়েদের একটা ভালো সুযোগ আছে এবং তারা সবজায়গায় সাফল্য দেখাচ্ছে’, বলেও অবহিত করেন শেখ হাসিনা।
শান্তিরক্ষীদের সফলভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার আহ্বান করার পাশাপাশি নিরাপদে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন সেই আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বিমানবাহিনী এবং পুলিশবাহিনীর সব শান্তিরক্ষীদের বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বর্তমানে পেশাদারিত্ব সততা নিষ্ঠা আন্তরিকতা বজায় রাখার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ বাংলাদেশের সব শান্তিরক্ষী যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা সেটা অবশ্যই করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলুন সবাই মিলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি এই দেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলি।’ পাশাপাশি করোনার হাত থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী যেন খুব দ্রুত মুক্তি পায় সেই কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেনাকুঞ্জ প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শহীদ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য এবং আহত শান্তিরক্ষীদের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ছাড়াও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এছাড়া সেনাকুঞ্জে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।