দেড় একরে সহস্রাধিক বৃক্ষে সেজেছে রংপুরের ‘মুজিব উদ্যান’
২৯ মে ২০২১ ২০:৫৪
ঢাকা: রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ সংলগ্ন দেড় একর জমিতে রোপণ করা হয়েছে সহস্রাধিক বৃক্ষ। ফলজ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষে সাজানো হয়েছে গোটা এলাকা। রয়েছে একটি নয়নাভিরাম ফুলবাগানও। উদ্যানটি একদিকে যেমন শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে চলেছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে তারই জন্মশতবার্ষিকীকে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাগানটি। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুজিব উদ্যান’।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে মুজিববর্ষে সারাদেশে পালন করা হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। জাতির পিতার স্মরণে তেমনই এক ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে রংপুরে তৈরি করা হয়েছে এই ‘মুজিব উদ্যান’। কারমাইকেল কলেজ জমি দিয়ে সহায়তা করলেও এই উদ্যান গড়ে উঠেছে রংপুর জেলা কৃষক লীগের উদ্যোগে।
সারাবাংলার কাছে এই ‘মুজিব উদ্যান’ গড়ে তোলার ভাবনা তুলে ধরেছেন জেলা কৃষক লীগের সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী। তিনি জানালেন, গত বছরের ২৩ আগস্ট এই মুজিব উদ্যানের উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের ১৫ জুন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। গত বছর করোনা মহামারির মধ্যে সংশয় থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই কর্মসূচি পালন করেছি। তখন ভেবেছি, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটু আলাদা কিছু করা দরকার। তখনই মাথায় মুজিব উদ্যান গড়ে তোলার ভাবনা মাথায় আসে। সেই চিন্তা থেকে এবং তরুণ প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মের মধ্যে জাতির জনকের চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই উদ্যান গড়ে তুলেছি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাহায্যে এই উদ্যান তৈরি করা হয়েছে।
উদ্যানের শুরুটা যেভাবে, সে কথা তুলে ধরে রংপুর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি বলেন, এই উদ্যান গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ছিল বড় একটি জায়গা। আমাদের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের অনেক জমি তখন ফাঁকা পড়ে ছিল। পরে মুজিব উদ্যানের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে কারমাইকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমির জন্য লিখিত আবেদন করি। কর্তৃপক্ষ উদ্যান তৈরির জন্য এক একর জমি দিয়েছিল প্রথমে। পরে আরও বড় পরিসরে জায়গার প্রয়োজন হলে আবার কলেজ কর্তৃপক্ষকে দলীয়ভাবে জানাই। তারা আরও আধা একর জমি দান করে। এখন মোট দেড় একর জমির ওপর এই উদ্যান তৈরি করা হয়েছে।
কারমাইকেল কলেজের কাছ থেকে দেড় একর জমি পাওয়ার পর শুরু হয় বাগান তৈরির জন্য জমি প্রস্তুতির কাজ। এরপর ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মুজিব উদ্যান’ গড়ে তোলার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সমীর চন্দ্র এবং সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর একবছরে উদ্যানের বৃক্ষরাজি ফুল-ফলে শোভিত। ফুলবাগানটি সৌন্দর্যবর্ধন করেছে উদ্যানটির।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে আমরা উদ্যানে বনজ, ফলজ ও ওষধি— এই তিন ধরনের গাছ লাগিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন এই ধরনের গাছগুলো রোপণ করার জন্য। পাশাপাশি আমরা একটা ফুলের বাগিচাও করেছি উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য।
কী পরিমাণ গাছ এখন পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে— জানতে চাইলে প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, শুরুতে আমরা ৯৮০টি গাছ লাগিয়েছিলাম। এরপর এই ৯-১০ মাসে বিভিন্ন সময় আরও অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। এখন হাজারের বেশি গাছ রয়েছে উদ্যানে। তবে গত বন্যায় আমাদের কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কিছু চারাও তৈরি করেছে। সেগুলো খুব শিগগিরই রোপণ করা হবে।
মুজিব উদ্যান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অর্থায়নের কথা জানতে চাইলে প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে এবং সহযোগিতায় উদ্যানের সকল অর্থায়ন করা হয়েছে। উদ্যানের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা করা দরকার তা আমরা করছি।
‘সাধ আছে সাধ্য নাই’— এমন আক্ষেপ জানিয়ে কৃষক লীগের এই নেতা বলেন, কারমাইকেল কলেজ আমাদের জায়গা দিয়েছে। এটি অনেক বড় ব্যাপার। তবে আমাদের গাছের ফুল-ফল বিভিন্ন সময় চুরি হচ্ছে। উদ্যানের নিরাপত্তার জন্য আরও শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এই মুহূর্তে সেটি পারছি না। তবে আশা করি সেটিও শিগগিরই করতে পারব। ভবিষ্যতে এই উদ্যানটিও আরও বড় করার ইচ্ছা তো আছেই।
উদ্যান তৈরি করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়নি বলে জানালেন প্রাণকৃষ্ণ। তবে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা তো ছিলই। তিনি বলেন, গত বছর হঠাৎ তীব্র বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। তখন আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। আবার অনেক সময় অনেক গাছের চারা পাই না। নিজেরা চেষ্টা করছি চারা তৈরির। তাল গাছের চারা খুঁজেও পাইনি। প্রাকৃতিকভাবে তাল গাছ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বজ্রপাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু তালগাছের চারা না পাওয়ায় এখনও তা রোপণ করা যাচ্ছে না। এরকম বিভিন্ন সময় চারার সংকটে পড়ে থাকি।
উদ্যানের নিরাপত্তা সংকটকেই আপাতত বড় সমস্যা মনে করছেন প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী। কারণ ফুল-ফলের গাছগুলো অনেক সময় চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে সার্বক্ষণিক পাহারা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি। বর্তমানে কারমাইকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছুটা সহায়তা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আপাতত পাহারার ব্যবস্থা করতে পারছি না। তবে কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকেন, তারা যা একটু দেখভাল করছেন।
উদ্যান গড়ে তোলার বিষয়ে কারও কাছে সহায়তা পেয়েছেন কি না— জানতে চাইলে প্রাণকৃষ্ণ বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি কিংবা অন্য কোনো সাহায্য পাইনি। আসলে সরকারি সাহায্য পাব, সে চিন্তাও করিনি। মুজিবের আদর্শকে ধরে রাখার জন্য কৃষকলীগ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
উদ্যান নিয়ে বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরকম কোনো চিন্তা নেই। উদ্যনের ফলমূল বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
উদ্যান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, নতুন প্রজন্ম জানবে আমাদের দেশে একটি মুজিব উদ্যান রয়েছে এবং সেটি রংপুরে কৃষক লীগের উদ্যোগে গড়ে তোলা— এটুকুই প্রত্যাশা। কৃষকলীগ যতদিন বেঁচে আছে, ততদিন এই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। আর যদি সরকার কোনো উদ্যোগ নেয় বা কোনো মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয় দেখভালের জন্য, সেটি নিঃসন্দেহে অনেক সুসংবাদ হয়ে আসবে।
সারাবাংলা/এসএসএ/টিআর