Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭ থেকে ১০ দিন বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট অঞ্চল

শাহীনূর সরকার, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর
২৯ মে ২০২১ ২৩:৫২

ঢাকা: শনিবার দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ব্যবধানে কমপক্ষে চার বার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে সিলেট। মৃদু ভূমিকম্প হওয়ায় এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এ ধরনের ভূমিকম্প ভালো লক্ষণ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প অনেক সময় বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলে আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহ সিলেট এলাকা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এ অবস্থায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৯ মে) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট, ১০টা ৫১ মিনিট ও ১১টা ২৯ মিনিটে তিন বার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান সারাবাংলাকে জানান, ১০টা ৫১ মিনিটের ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১। এই মাত্রার ভূমিকম্পে সাধারণত খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয় না বলেও জানান তিনি।

এত অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন তিন বার ভূমিকম্পের ঘটনাকে উদ্বেগজনক মনে করছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ভূমিকম্পে কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হবে, সেটি নির্ভর করে উৎপত্তিস্থল ও মাত্রার ওপর। আজকের ভূমিকম্পের মাত্রা কম হওয়ায় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এটি নির্দেশ করে যে অদূর ভবিষ্যতে আমরা বড় একটি ভূমিকম্পের সম্মুখীন হতে পারি। তবে সেটি কোথায় হবে, সুনির্দিষ্টভাবে সেটি বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, মেঘালয়, আসাম, সিলেটে এসব ভূমিকম্প হতে পারে। মেঘালয়ে হলে আমাদের এখানে প্রভাব কম পড়বে। আবার আসামে হলে প্রভাব বেশি পড়বে।

ছোট ছোট এসব ভূমিকম্প থেকে বড় দুর্যোগ আসতে পারে— এমন আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সও। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ধরনের দুর্যোগের পূর্বাভাস। তাই সিলেটের আজকের ভূমিকম্পের ঘটনাকে সতর্ক সংকেত হিসেবে আমলে নিতে হবে।

প্রস্তুত প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল

ভূমিকম্প নিয়ে এমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। আগামী সাত দিনের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানালেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

মেয়র সারাবাংলাকে বলেন, ভূমিকম্প হলে আমরা জনগণকে কী ধরনের সহযোগিতা দেবো, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাত দিনের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আমাদের প্রতিটি বিভাগ, বিশেষ করে বিদ্যুতের চারটি জোনে স্পেশাল টিম রাখা হবে। যদি কোনো ধরনের ঘটনা ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে যেন তারা সেবা দিতে পারেন, সেভাবে বলে রাখা আছে। একইভাবে গ্যাস বিতরণের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরিফুল হক বলেন, থানাগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের রাখা হয়েছে, যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে আশপাশের এলাকাগুলোতে সেবা দেওয়া যায়। তাছাড়া আমরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও চিঠি দিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলব।

আগামীকাল রোববার (৩০ মে) থেকে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বললেন মেয়র আরিফুল। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব। কোথাও ঝুঁকিপূর্ণ  কিছু দেখলে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করব। বিশেষ করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেসব এলাকায় ঢুকতে পারে না, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের ব্যবস্থাও করব।

যেকোনো দুর্যোগ এলে তার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানালেন ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে যা কিছু করণীয়, আমরা করেছি। আমাদের সব-স্টেশনে যতগুলো স্টাফ আছে, তাদের সবাইকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ইক্যুইপমেন্ট রেডি রেখেছি। বলতে গেলে আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সারাবাংলাকে বলেন, দুর্যোগের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যেন সবাইকে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসতে পারি, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিকিৎসাসেবা দিতে পারি— সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে কারণে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ও ইমার্জেন্সি বিভাগ সবসময় প্রস্তুত থাকে। কারণ দুর্যোগ কখন আসবে, তা কেউ বলতে পারে না। তারপরও যেহেতু এ ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে, আমরা চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সবাইকে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখব।

যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকায় সিলেট অঞ্চলের মানুষকে আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক জহির বিন আলম। এই সময়টাতে লিফটে কম ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ ভূমিকম্পে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং লিফ্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গ্যাস লাইন ও বিদ্যুতের লাইনের ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এসব লাইন যেকোনো সময় বন্ধ রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে বাড়ির মালিক এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের। সরাসরি ভূমিকম্পে মানুষ মারা যায় না। কিন্তু লিফটে আটকে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গ্যাসের লিকেজ ও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এজন্য এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

রাতে ঘুমানোর সময় বিছানার পাশে আলমারি-শোকেস যেন না থাকে, সে বিষয়ে সজাগ থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে শিশুরা যেন আলমারি বা শোকেসের আশপাশে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ তার।

সারাবাংলা/এসএসএস/টিআর

ফায়ার সার্ভিস ভূমিকম্প সিলেট অঞ্চল সিলেট সিটি করপোরেশন সিলেটে ভূমিকম্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর