বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি
৩১ মে ২০২১ ১৫:৩৪
ঢাকা: সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, তাকে হেনস্তাকারী আমলা-পুলিশের শাস্তি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের অপসারণ, বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং উপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
সোমবার (৩১ মে) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক বাচ্চু ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির চিত্র (যেমনঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না, ১৮০০ পদে নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ১০ মাস বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে, ৯ সরকারি হাসপতালে কেনাকাটায় ৩৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি) তুলে ধরছিলেন তখন দুর্নীতিবাজ আমলারা তাকে সংবাদ দেওয়ার চক্রান্তমূলক কথা বলে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের পিএস এর রুমে ডেকে নিয়ে ছয় ঘণ্টা ধরে হেনস্তা করে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে উপনিবেশিক আমলের ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতা, বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতায় সরকারি হস্তক্ষেপের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ এবং সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।
সমাবেশে বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, রোজিনা ইসলাম দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-আমলার প্রতিহিংসার শিকার। তাকে বাতিল আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩য় ভাগের মৌলিক অধিকারের ২৬ ধারার সঙ্গে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট সাংঘর্ষিক। ফলে যেদিন থেকে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়েছে সেদিন থেকেই মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্বাধীনতার পরেই ২য় সংশোধনীর মাধ্যমে কালাকানুন তৈরির রাস্তা খুলে দেয় তৎকালীন শেখ মুজিব সরকার। যার পথ বেয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ একের পর এক কালাকানুন জারি হতে থাকে।
সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক কুখ্যাত কালো আইন জারি করে নাগরিকের বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। যার বলি হচ্ছেন সাংবাদিক-শিক্ষক-লেখক-কার্টুনিস্টসহ মুক্তচিন্তার মানুষেরা — বলেন বক্তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর আমলা-প্রশাসন-পুলিশকে ব্যবহার করে দিনের ভোট রাতে করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেছে। ফলে আমলা-পুলিশের ওপর নির্ভরশীল সরকার জনগণের যে কোনো প্রতিবাদকে ভয় পাবেই। সামান্য কার্টুন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক লেখা কোনো কিছুই তারা সহ্য করতে পারে না। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমন করতেই সরকার কালা কানুন প্রণয়ন ও ব্যবহার করছে।
পাশাপাশি, বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী নির্যাতন-নিপীড়ন ও কালাকানুন বাতিলের দাবিতে সকল বাম গণতান্ত্রিক দল-ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম