মিতু হত্যা: সেই মুসার স্ত্রীর জবানবন্দি
৩১ মে ২০২১ ২০:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচ বছর আগে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার কয়েকদিন পর থেকে ‘রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ’ কামরুল ইসলাম শিকদার মুসার স্ত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মুসা বাবুল আক্তারের সোর্স ছিলেন, যাকে হত্যাকাণ্ডের পর চিনতে না পারার কথা বলার কারণেই সন্দেহের তীর গিয়েছিল বাবুলের দিকে।
সোমবার (৩১ মে) মিতু হত্যা মামলায় মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসেন মো. রেজার আদালতে জবানবন্দি দেন।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি গণমাধ্যমে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, আমাদের কাছে এবং জবানবন্দিতেও তাই দিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা বাবুলের স্ত্রী মিতুকে কিলিং মিশনের নেতৃত্বদাতা হিসেবে অভিযুক্ত। হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল, পুলিশ তদন্ত করে যাকে মুসা হিসেবে শনাক্ত করেছিল। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটে কর্মরত থাকার সময় ওই মুসা তার সোর্স ছিলেন। কিন্তু সেসময় ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন।
তবে গত ১২ মে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার মুসাকে চেনার কথা স্বীকার করেন বলে পিবিআই জানিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ‘নিখোঁজ’ আছেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। তবে তার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে ওই বছরের ২২ জুন প্রশাসনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না।
বাবুল আক্তারকে গ্রেফতারের পর মুসার স্ত্রী গণমাধ্যমে আরেক দফা মুখ খোলেন। তিনি জানান, একসময় সৌদি আরবে ছিলেন তার স্বামী। ২০০২ সালে দেশে ফিরে বালু সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। তখনই পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। ২০০৩ সালে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর মুসা তার ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ শুরু করে। বাবুলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিলেন মুসা।
পান্নার দাবি, মিতু হত্যাকাণ্ডের দিন সকালে মুসা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাকলিয়া এলাকার কালামিয়া বাজারের বাসাতেই ছিলেন। বাবুল আক্তারের স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের খবর তারা জানতে পারেন টেলিভিশনের খবর দেখে।
মিতু হত্যার সঙ্গে মুসার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে পান্না জানান, তিনি মুসাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেও তিনি খোলাসা করে কিছু বলেনি। তবে একবার ফোনে বলতে শুনেছেন, ‘আমি সমস্যায় পড়ে গেছি। আপনার কথায় বিশ্বাস করে কাজ করেছি। আমার পরিবারের কিছু হলে মুখ খুলতে বাধ্য হব স্যার।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআই’র ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
ওইদিনই বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ