Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছর ব্যবধানে প্রধান ৫ নিত্যপণ্যের ৪টির দামই বেড়েছে

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২১ ২২:০৫

ঢাকা: দেশে গেল এক বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রধান পাঁচ পণ্যের মধ্যে চাল, চিনি, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। কমেছে শুধুমাত্র মসুর ডালের দাম। বছর ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা, চিনি ১০ থেকে ১৩ টাকা ও পেঁয়াজ ৫ থেকে ১০ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটারে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। তবে মসুর ডালের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ১ জুন ও চলতি বছরের একই দিনের সরকারি তথ্যেই বাজারের ঊর্ধ্বমুখী এই প্রবণতা স্বীকার করে নেওয়া হয়ছে। তবে বাজারের প্রকৃত অবস্থা আরও লাগামহীন। সরকারি তথ্যে সবধরনের মসুর ডালের দাম কমার দাবি করা হলেও বিক্রেতারা বলছেন, সম্প্রতি ভারতীয় মসুর ডাল কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। কিন্তু দেশি মসুর ডালের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।

কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশি মসুরের ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরও দাম একই রকম ছিল। আর ভারতীয় মসুরের ডাল ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রমজানেও এ জাতীয় ডালের দাম ছিল ৬০ টাকা। মসুর ডালের দাম সম্প্রতিই বেড়েছে।’

তিনি বলেন বলেন, ‘খোলা চিনি ৭৫ টাকা ও প্যাকেটের চিনি ৭৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আগের বছর ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল এখন ১৪০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে, গেল বছর বিক্রি হতো ৯০ টাকা লিটারে। আর বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা লিটারে, গেল বছর বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা লিটারে। গত এক বছরে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম।’

মহাখালীর বউবাজারের ভাই ভাই স্টোরের মালিক আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এখন মিনিকেট ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫ টাকা ও আটাশ ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর মিনিকেট ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা ও আটাশ ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। এছাড়া বোতলের সয়াবিন তেল এখন ১৪০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর এই তেলের দাম ছিল ১০৫ টাকা। দেশি মসুর ডাল ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গেল বছরও বলতে গেলে দাম একই রকম ছিল। তবে ভারতীয় মসুর ডাল গেল বছর ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি গেল বছর ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে।’

বিজ্ঞাপন

এই বিক্রেতার তথ্যমতে, বাজারে নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গেল সপ্তাহে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও এখন তা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গেল বছরের ১ জুন সরু চালের মধ্যে নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরের জুনের প্রথম দিনে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। টিসিবি বলছে, বছর ব্যবধানে সরু চালের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের চাল গেল বছর ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। শতাংশিক হিসাবে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া মোটা চাল গেল বছর ৩৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর জুনের প্রথম দিনে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। শতাংশিক হিসাবে দাম বেড়েছে দশমিক ৪৮ শতাংশ।

তবে সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (১ জুন) মিনিকেট ৬০ টাকা, নাজির ৬৫ টাকা ও আটাশ ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গেল বছর মিনিকেট ৫৫ টাকা, নাজির ৬০ টাকা ও আটাশ ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। টিসিবি ও বাজারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বছর ব্যবধানে কেজিতে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম বেড়েছে ৫ টাকা এবং স্বর্ণা বা আটাশ ৯ টাকা।

টিসিবির তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১ জুন) খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে। গেল বছরের একই দিনে তা বিক্রি হয়েছে ৮৮ থেকে ৯৫ টাকায়। বছর ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর এক বছরেই খোলা সয়াবিন তেল লিটারে বেড়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। বোতলের সয়াবিন তেল মঙ্গলবার (১ জুন) ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে। গেল বছর বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর এক বছরে বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৪০ টাকা। টিসিবির বাজারদর ও সরেজমিনে বাজার ঘুরে সয়াবিন তেলের বাড়তি দামের প্রায় একইরকম তথ্য পাওয়া গেছে।

টিসিবি বলছে, মঙ্গলবার (১ জুন) মসুরের ডাল (বড় দানা) ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর তা বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। শতাংশিক হিসাবে দাম কমেছে দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর কেজিতে বড় দানার মসুর ডালের দাম কমেছে ৫ টাকা। এদিন মাঝারি দানার মসুর ডাল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গেল বছর তা বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। শতাংশে দাম কমেছে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর কেজিতে মাঝারি মানের মসুর ডালের দাম কমেছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া ছোট দানার মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর তা বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এ ধরণের মসুর ডালের দামও কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। তবে বাজারের চিত্র ভিন্ন। বিক্রেতারা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দেশি মসুর ডালের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও সম্প্রতি ভারতীয় মসুর ডালের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।

এদিকে, টিসিবির তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে তা ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। মাস ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর গেল বছর জুনের প্রথম দিন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। বছর ব্যবধানে এ জাতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। সার্বিকভাবে বছর ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ এখন ৪০ থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এ বছর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ছে শতকরা ২ দশমিক ২৯ শতাংশ ও কেজিতে ১০ টাকা। আর বাজারের তথ্য বলছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আবারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজের বাজার আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে বিক্রেতাদের ধারণা।

টিসিবির তথ্য জানাচ্ছে, মঙ্গলবার (১ জুন) ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি হয়েছে। গেল বছরের একই সময় তা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এক বছরে কেজিতে চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৩ টাকা।

মন্তব্য জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। অনেকে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। সবমিলিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এই রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। এটি সাধারণ মানুষের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। মানুষ এতে বিপাকে পড়েছে, বিপদে পড়েছে। এটি কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।’ সরকার প্রধান এই পাঁচ পণ্যের দাম কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

ক্যাব চাল চিনি টিসিবি ডাল দাম বেড়েছে ৪টির পেঁয়াজ প্রধান ৫ পণ্য সয়াবিন তেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর